গড়ের মাঠে বড়মা’র নাতি, কলকাতা লিগ খেলবে মতুয়ার দল

0

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,২৫ মার্চ : আসন্ন কলকাতা ফুটবল লিগে অংশ নিতে চলেছে মতুয়া সম্প্রদায়ের দল। তবে নানান কারণে শুধু নিজেদের ‘মতুয়া ফুটবল ক্লাব’ নামে খেলতে পারছে না। তাদের নামের সঙ্গে জুড়তে হচ্ছে কলকাতা লিগের প্রথম ডিভিশনের ক্লাব মিলনবীথিকে। গত সোমবার এরিয়ান ক্লাবে মিলনবীথি ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করে ফেলেছেন বিজেপি সাংসদ ও মতুয়া সম্প্রদায়ের গুরুমা বড় মায়ের নাতি শান্তনু ঠাকুর। মিলনবীথির সঙ্গে মতুয়ার যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন ময়দানের কোচ রঘু নন্দী।

সোমবারের বৈঠকে ঠিক হয়, প্রথম ডিভিশনের মিলনবীথি তাদের ফুটবলের পুরো দায়িত্ব মতুয়া ফুটবল ক্লাবকে ছেড়ে দিচ্ছে। মতুয়ার ফুটবলের দায়িত্বে যিনি আছেন সেই গৌতম ঠাকুর ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে জানান, “আমাদের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করতে চলেছে মিলনবীথি। এই পাঁচ বছরে আমাদের ফুটবল টিম লিগ খেলবে। ক্লাবের নাম বদলে যাচ্ছে। নতুন হচ্ছে ‘মতুয়া মিলনবীথি ফুটবল ক্লাব’। খুব শীঘ্রই মিলনবীথির কর্তারা আইএফএকে সরকারি ভাবে জানিয়ে আবেদন করবে।”

গৌতম ঠাকুর আরও বলেন, দুই দলের জার্সির রং একই থাকবে। অর্থাৎ মিলনবীথির জার্সির রং লাল-হলুদ। আর মতুয়ার রং লাল-সাদা। দুটো জার্সিই রাখা হচ্ছে। আর এই জার্সিতে মিলনবীথি ও মতুয়ার নিজেদের দুটি লোগো থাকবে। ফুটবল পরিচালনার জন‍্য মতুয়া ফুটবল ক্লাবের কর্তারাই নতুন কমিটি গড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

বাংলার ফুটবলের উন্মাদনা বাড়াতে এবার কলকাতার ফুটবলে মতুয়া সম্প্রদায়ের দর্শকদের উপস্থিতি ময়দানে প্রভাব ফেলবে ধরেই নেওয়া যায়।

উল্লেখ্য, সম্প্রদায়ের ক্লাব হিসেবে ভারতীয় ফুটবলে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার তিন প্রধান মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান। বাঙালদের দাবি ইস্টবেঙ্গল তাদের। আর এপার বাংলার মানুষের দাবি মোহনবাগান তাদের। যদিও চুনী গোস্বামী, সুব্রত ভট্টাচার্যরা বাঙাল হয়েও মোহনবাগানের ঘরের ছেলে। এই নিয়ে তর্ক বিতর্ক আছেই। এখানে ফুটবলকে কেন্দ্র করে লড়াইয়ের প্রাধান‍্য পায় ঘটি – বাঙালের লড়াই। ওপার বাংলা থেকে আসা সম্প্রদায়ের প্রতীক হল ইস্টবেঙ্গল। এপার বাঙলার প্রতীক মোহনবাগান। আর মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্লাব হল মহমেডান স্পোর্টিং। আবার মতুয়ারাও এসেছেন ওপার বাংলা থেকেই। তবুও তাদের একটা সংগঠিত সমর্থক বৃত্ত আছে। এই মুহূর্তে গোটা ভারতে মতুয়ার জন সংখ‍্যা প্রায় আড়াই কোটি। যার অধিকাংশই আছে পশ্চিমবঙ্গে।
কলকাতা ময়দানে অঞ্চল ভিত্তিক ক্লাবও আছে। বড়িশা, কালীঘাট এমএস, কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্স, সুরুচি সংঘ, বিএসএস,সাদার্ন সমিতি, রেনবোর মত বহু ক্লাবগুলি অঞ্চল ভিত্তিক। সাপোর্টার বেস নেই। যা আছে মতুয়ার।

আসলে কলকাতা ফুটবলের মূল স্রোতে আসার পরিকল্পনার কথা প্রথম ভাবেন বাংলার প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম ঠাকুর। তিনিও মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। তিনি নিজের বাড়ি বগুলাতে একটা কেটিএফএ নামে ফুটবল কোচিং ক‍্যাম্প চালান। ছাত্র সংখ‍্যা ৩০০। মতুয়া সম্প্রদায়ের ছেলেরাই এই ক‍্যাম্পে খেলে থাকে। বড়মির নাতি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনা করে কলকাতা লিগে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লকডাউনের আগে কলকাতা লিগ খেলতে চায় বলে আইএফএকে চিঠিও দিয়েছিলেন শান্তনু ঠাকুর। কিন্তু নিয়মের অনেক জটলায় মতুয়া ফুটবল ক্লাবের নামে অনুমোদন পাওয়া যাবে না। তাই মিলনবীথির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ময়দানে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে মতুয়া ফুটবল ক্লাব।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আইএফএ সচিব উৎপল গাঙ্গুলির জমানায় শেষের দিকে টাকা দিলে নতুন দলকে লিগ খেলতে অনুমতি দেওয়ার নিয়ম তৈরি হয়েছিল। সেই নিয়মের জন‍্যই ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সুরুচি সংঘ, মুখ‍্যমন্ত্রীর ছোট ভাই স্বপন ব‍্যানার্জির কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্স সরাসরি তৃতীয় ডিভিশনে খেলার সুযোগ পেয়েছে। আবার দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু দেবু মুখার্জির তালতলা দীপ্তি কিনে নিয়েছেন। প্রথম বছর তালতলা দীপ্তি নাম রাখলেও পরের বছর নাম বদলে করা হয় শ্রীভূমি। মতুয়া সেই রাস্তায় হাঁটছে।

কি আছে এই মতুয়া সম্প্রদায়ে? ১৮৮০ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দি নিবাসী হরিচাঁদ ঠাকুরের হাত ধরে স্থাপিত হয় মতুয়া মহাসংঘর। প্রেমভক্তিরূপ সাধনা ধারাকে বেগবান করার জন‍্য যে সহজ সাধন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয় তাকে বলা হয় মতুয়াবাদ। এই মতবাদের অনুসারীরাই মতুয়া নামে পরিচিত।
১৯৪৭ সালের পর হরিচাঁদের নাতি পি আর ঠাকুর ঠাকুরনগরে মতুয়া সংঘের প্রধান কার্যালয় করেন। সেই পরিবারের উত্তরসুরী হলেন বীনাপানি দেবি অর্থাৎ বড়মা।
মতুয়ার আর্শীবাদ পেতে বসে থাকে সব রাজনৈতিক দল। গোটা পশ্চিমবঙ্গে প্রায় মতুয়া সম্প্রদায়ের জন সংখ‍্যা প্রায় আড়াই কোটি। বাংলাদেশ তো বটেই, ভারতের বিভিন্ন রাজ‍্যে ছড়িয়ে আছে এই মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ।

বাংলাদেশ থেকে আসার পর প্রথমে বামফ্রন্টকে সমর্থন দেওয়া হয়। ১৯৭৭ এর পর কংগ্রেসকে। পরে তৃণমূল এবং এখন তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপিতেও আছে মতুয়ার দুটি অংশ। ২০০৯ সাল থেকে মতুয়ার সমর্থন পেয়ে এসেছে তৃণমুল। মমতা ব‍্যানার্জি ছিলেন বড়মার ঘনিষ্ঠ। পরে ২০১৯ এর ৬ ফেব্রুয়ারি বড়মার কাছে ছুটে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নির্বাচন হল বিষম বস্তু। এই সম্প্রদায়কে হাতে পেতে প্রধানমন্ত্রী, মুখ‍্যমন্ত্রী ছুটে আসেন। কারণ একটাই, মতুয়ার বিপুল জনসংখ‍্যা।

কলকাতা লিগে খেললে প্রিয় দলের মতুয়া সর্মকররা সমর্থন করবে। তখন গ‍্যালারি কাঁপবে। এই দলের অভিষেককে কেন্দ্র করে মতুয়ার একটা বড় অংশ উন্মাদনা শুরু করে দিয়েছে। গত সোমবার বৈঠকেই ড্রাম নিয়ে হাজির ছিল মতুয়ার দর্শকরা। ময়দান অপেক্ষায় থাকল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here