◆আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত◆
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,২২ ফেব্রুয়ারি : সদ্য সন্তোষ ট্রফি ও রনজি ট্রফিতে বাংলা ব্যর্থ হওয়ায় গতকাল ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, নাম না করে IFA ও CAB কর্তাদের সমালোচনা করে কোটার খেলোয়াড় খেলানোর অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর সেই বক্তব্য শোনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ‘ওপেন’ মেল করে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে পাল্টা জবাব দিলেন IFA সচিব অনির্বান দত্ত।
আজ, বুধবার সন্ধ্যায় ক্রীড়ামন্ত্রীকে তিন পাতার ই-মেল করেন অনির্বান। তাঁর সেই ই-মেলে বিনয়ের সঙ্গে মন্ত্রীর অভিযোগের জবাব দিয়েছেন স্পষ্ট ভাবে। কোচ নির্বাচন থেকে ফুটবলার নির্বাচনের পদ্ধতি কি ভাবে হয়েছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ ই-মেলে তুলে ধরেছেন IFA সচিব।
IFA সচিব ই-মেলে জানিয়েছেন, অ্যাসোসিয়েশনের যে কোচেস কমিটি ( তপনজ্যোতি মিত্র, অমিত ভদ্র, অলোক মুখার্জি, জামশিদ নাসিরি, কুন্তলাঘোষ দস্তিদার, অশোক চন্দ, অরূণ ঘোষ) আছে তারাই কোচ নির্বাচন করেছেন। সংবিধান মতে কোচ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোচেস কমিটিই শেষ কথা। এই কমিটিই কোচ বেছে নিয়েছেন। এই কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে IFA -এর অফিস বেয়ারার্সদের কোনও ভূমিকা নেই সেটাও উল্লেখ করেছেন ই-মেলে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গতকাল মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস কোচ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন,”যে কোচ, গত বছর বাংলাকে সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে তুলেছিল, সেই এবার বাদ পড়ে গেল!” মন্ত্রীর এই অভিযোগের উত্তর দিতে গিয়ে কোচ নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি কী ভাবে হয়েছে, তার বিবরণও মন্ত্রীকে লেখা মেলে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেছেন সচিব অনির্বান। তিনি যা লিখেছেন তা এইরকম, এবারের সন্তোষ ট্রফির জন্য কোচেস কমিটির সভায় তিন জন কোচের নাম উঠেছিল।
(১) বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, এএফসি ‘এ’ লাইসেন্স কোচ। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডানের প্রাক্তন কোচ। এবং সদ্য ন্যাশনাল গেমসে সোনা জয়ী বাংলা কোচ।
(২) রঞ্জন চৌধুরী, এএফসি ‘এ’ লাইসেন্স কোচ। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের প্রাক্তন সহকারী কোচ। ২০১৭-‘১৮ মরসুমে সন্তোষ ট্রফিতে কোচ হিসেবে বাংলাকে রানার্স করেছিলেন রঞ্জন চৌধুরী। এছারাও এই বছর কলকাতা লিগে কোচ হিসেবে ভবানীপুরকে রানার্স করেছেন রঞ্জন চৌধুরী।
(৩) রঞ্জন ভট্টাচার্য, এএফসি ‘বি’ লাইসেন্স কোচ। জর্জটেলিগ্রাফের প্রাক্তন কোচ। গত বছর কোচ হিসেবে সন্তোষ ট্রফিতে বাংলাকে রানার্স করেছেন। বর্তমানে নিউ সুরুচি সংঘের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর।
যেহেতু বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য ন্যাশনাল গেমস থেকে কোচ হিসেবে বাংলাকে সোনা এনে দিয়েছেন তাই কোচেস কমিটির সদস্যরা সন্তোষ ট্রফির জন্য বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের উপর আস্থা রেখে কোচ করেছিলেন। মন্ত্রীকে অনির্বান আরও জানিয়েছেন, গত বছর সন্তোষ ট্রফিতে কোচ হিসেবে বাংলাকে রানার্স রেছিলেন রঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর পারফরমেন্স দেখেই ন্যাশনাল গেমসের জন্য বাংলা দলের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রথমে রঞ্জন ভট্টাচার্যকেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এএফসি ‘এ’ লাইসেন্স কোর্স করার ব্যস্ততার জন্য সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন রঞ্জন ভট্টাচার্য। তারপরেই ন্যাশনাল গেমসের জন্য কোচেস কমিটি বিশ্বজিৎকে প্রস্তাব দেয়। বিশ্বজিৎ তা গ্রহণ করে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করে সোনা এনে দিয়েছেন।
ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের অভিযোগ ছিল, ‘কোটা’র খেলোয়াড় ছিল। যোগ্য প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দিতে হবে। মন্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাবও ই-মেলে দিয়েছেন IFA সচিব অনির্বান দত্ত। তিনি জানিয়েছেন, সন্তোষ ট্রফির জন্য ট্রায়ালের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই ট্রায়াল দেখেই কোচ চূড়ান্ত দল গড়েন। ফুটবলার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও IFA কর্তারা কোচকেই স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। IFA শুধু ট্রায়াল, শিবির সহ দলের যাবতীয় ব্যবস্থা করেছে। টেকনিক্যাল বাপারে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করেনি।
ক্রীড়ামন্ত্রীকে IFA সচিবের লেখা ই-মেল প্রকাশ্যে আসতেই ময়দানে গুঞ্জন শুরু হয়। উঠছে নানা প্রশ্ন। অনির্বানের বাবা প্রয়াত প্রদ্যোৎ দত্তর সঙ্গে রাজ্যের তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর সম্পর্ক ভাল ছিল না। পরে যদিও তাঁদের মধ্যে ভাল বন্ধুত্বর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। অরূপ বিশ্বাস ও অনির্বান দত্তর সম্পর্ক কোন দিকে যাচ্ছে? সংঘাত নাকি নিছকই ভুল বোঝাবুঝি? এই বিষয়ে IFA সচিব অনির্বান দত্তকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,”সংঘাতের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? সন্তোষ ট্রফির ব্যর্থতার কারণ হিসেবে তিনি যা মন্তব্য করেছেন তা আমি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি। কোচ ও ফুটবলার নির্বাচনের প্রক্রিয়াটা উনি হয়তো অবগত নন। রাজ্য ফুটবলের নিয়ামক সংস্থার সচিব হিসেবে ক্রীড়ামন্ত্রীকে আমার জানানোটা উচিৎ বলে মনে হয়েছে। তাই মেল করে বিস্তারিত জানিয়েছি। অন্য কোনও অর্থ খুঁজবেন না। আমাদের মতো উনিও খেলাকে খুবই ভালবাসেন। ক্রীড়ামন্ত্রী সব সময় IFA -এর পাশে আছেন, আশাকরি ভবিষ্যতেও আমাদের পাশে থাকবেন।”