কুস্তিগিরদের পাশে বাংলার ক্রীড়াজগৎ, রাজপথে মমতার প্রতিবাদের মিছিল

0

◆কুস্তিগিরদের ন‍্যায় বিচার চেয়ে রাজপথে মুখ‍্যমন্ত্রী◆

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : দেশের কুস্তিগিরদের পাশে বাংলা। কুস্তিগিরদের ন‍্যায় বিচারের দাবি নিয়ে রাজপথে নামলেন ক্রীড়া জগতের ব‍্যক্তিত্বরা। গতকাল (মঙ্গলবার) নবান্নে কুস্তিগিরদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে প্রতিবাদের মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়। আর আজ সেই প্রতিবাদের মিছিল আছড়ে পড়ল দক্ষিণ কলকাতার রাজপথে।

বিকেল চারটে নাগাদ প্রতিবাদের মিছিল শুরু হয়ে শেষ হয় রবীন্দ্র সদনে। পদকজয়ী কুস্তিগিরদের দাবি না শোনা এবং তাঁদের উপর দিল্লি পুলিশের নিগ্রহর ঘটনা তীব্র নিন্দা করে পথে নামলেন বাংলার মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়। তাঁর সঙ্গে বাংলার ক্রীড়া জগতের বিভিন্ন ক্লাব, অ‍্যাসোসিয়েশনর ব‍্যক্তিত্বরা পথে নামলেন।

রবীন্দ্র সদনে মিছিল শেষ করে মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় বলেন,”আজ কুস্তিগিররা অসহায়। তাদের উপর অনেক অত‍্যাচার হয়েছে। এক মাসের বেশি ন‍্যায় বিচার চাইছে। আসল দোষীর এখনও শাস্তি হচ্ছে না। বিজপি সরকার কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। কুস্তিগিরদের উপর যে অন‍্যায় হয়েছে তার বিচার চাই।”

প্রতিবাদের মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বলছিলেন,”কুস্তিগিরদের নিয়ে যা ঘটছে তা অত‍্যন্ত লজ্জার। আজ তাদের পাশে থাকার বার্তা দিতেই বাংলার ক্রীড়া জগত এক হয়ে পথে নেমেছে। এটা একটা অরাজনৈতিক প্রতিবাদ। দেশের ক্রীড়া জগতের উচিত কুস্তিগিরদের পাশে থাকা।”

মিছিলে মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত

ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন,”যারা পদক জিতে দেশকে সম্মানিত করেছেন তাঁদের যে ভাবে নিগ্রহ করা হচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। আজ বাংলার ক্রীড়া জগত পথে নেমেছেন। ক্রীড়াপ্রেমী মুখ‍্যমন্ত্রী পথে নেমেছেন। আশাকরি গোটা দেশের ক্রীড়া জগৎ গর্জে উঠবে।”

এদিন মোহনবাগান,ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান ক্লাবের সঙ্গে পথে নেমেছিলেন বিওএ, আইএফএ, টেবল টেনিস সহ বাংলার একাধিক সংস্থার কর্তারা। মিছিলে হাঁটলেন বহু প্রাক্তন খেলোয়াড়েরা। আইএফএ সভাপতি অজিত ব‍্যানার্জি বলছিলেন, ” লাঞ্চিত,নিগৃহীত ভারতীয় কুস্তিগিরদের লড়াইকে সমর্থন করে আমরা পথে নেমেছি। আমরা কুস্তিগিরদের পাশে আছি।”

আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত,সভাপতি অজিত ব‍্যানার্জি ও ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার


আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত বলেন,” কুস্তিগিরদের সঙ্গে যা ঘটছে তা লজ্জার। আমরা সবাই ওদের ন‍্যায় বিচার চেয়ে পথে নেমেছি। আশাকরি কুস্তিগিররা ন‍্যায় বিচার পাবে।” বিওএ সভাপতি স্বপন ব‍্যানার্জি জানান, ” কৃতি কুস্তিগিরদের লড়াইকে সম্মান করি। আমরা ব্রিজভূষণের কড়া শাস্তি চাই।”

পায়ে পায়ে প্রতিবাদের মিছিলে মহমেডান কর্তারা

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ব্রিজভূষন শরণ সিং হলেন সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের(WFI) সভাপতি। এই ব্রিজভূষন হলেন ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ। উত্তরপ্রদেশের কাইজারগঞ্জ থেকে নির্বাচিত। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ। বিশেষ করে মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থার মারাত্বক অভিযোগ উঠেছে।ব্রিজভূষনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠার পর জানুয়ারি মাসে প্রতিবাদ জানিয়ে ধর্ণায় বসেন ভারতের প্রথম সারির কুস্তিগিররা। সমস‍্যার সমাধান না হওয়ায় এপ্রিল মাস থেকে দিল্লির যন্তর মন্তরে লাগাতার ধর্ণায় বসেন পদকজয়ী কুস্তিগিররা। গত রবিবার দিল্লির নতুন সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচিতে যাওয়ার চেষ্টা করলে কুস্তিগিরদের নিগ্রহ করে দিল্লি পুলিশ। পরে সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়া, ভিনেশ ফোগাটদের আটক করা হয়। পরে ছেড়ে দিলেও দেশের কৃতি কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে পুলিশ। ২৯ মে, সোমবার যন্তর মন্তরের যেখানে দিন রাত ধর্ণায় বসে ছিলেন সেই অস্থায়ী ধর্ণামঞ্চ ভেঙে দেয় পুলিশ।

যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই কুখ‍্যাত ব্রিজভূষন শরণ সিং (ফাইল ছবি)

সাক্ষী মালিক ২০১৬ সালে অলিম্পিকে কুস্তিতে পদকজয়ী প্রথম ভারতীয় নারী ক্রীড়াবিদ। বজরং পুনিয়া টোকিওঅলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী কুস্তিগীর।দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদকজয়ী ভিনেশ ফোগাট সহ দেশের কুস্তিগিররা পুলিশি নিগ্রহের প্রতিবাদে নিজেদের পদক গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দেশের হয়ে জেতা সমস্ত পদক গঙ্গায় বিসর্জন দিতে গিয়েও দিলেন না বিক্ষোভরত কুস্তিগিরেরা।

গত রবিবার পুলিশের নিগ্রহ কুস্তিগির সাক্ষী মালিক

মঙ্গলবার দিল্লি থেকে হরিদ্বারে যান বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটেরা। হর কি পৌড়ী ঘাটে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাক্ষী, বিনেশরা। সাক্ষীদের সঙ্গে ছিলেন পরিবারের লোকেরা। কুস্তিগিরদের সমর্থনে স্লোগান দেন সাধারণ মানুষ। অনেকে আবার কুস্তিগিরদের কাছে আবেদন করেন, তাঁরা যেন পদক বিসর্জন না দেন। ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের গ্রেফতারির দাবিতেও স্লোগান ওঠে সেখানে। তার মাঝেই সেখানে উপস্থিত হন কৃষক নেতারা। তাঁরা গিয়ে বজরংদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেন। কুস্তিগিরদের কাছ থেকে পদকগুলি চেয়ে নেন তাঁরা। কৃষকনেতারা বোঝান, দেশের হয়ে জেতা সম্মান এ ভাবে গঙ্গায় ফেলে দিলে সেটা দেশকে অপমান করা হবে। তাঁদের পরামর্শ মেনে নিয়েছেন বজরংরা। নিজেদের সিদ্ধান্ত বদল করেছেন কুস্তিগিরেরা। তবে তাঁরা কেন্দ্রকে পাঁচ দিনের সময়সীমা দিয়েছেন। তার মধ্যে তাঁদের দাবি না মানলে পাঁচ দিন পরে গঙ্গায় পদক বিসর্জন করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

অলোক মুখার্জি, প্রশান্ত ব‍্যানার্জি ও কৃষ্ণেন্দু রায় বুধবারের মিছিলে

ইতিমধ্যে কপিল দেব, ইরফান পাঠানরা আগেই কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কুম্বলে টুইট করে লেখেন, “গত রবিবার (২৮ মে) কুস্তিগিরদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে তা ঠিক নয়। কথা বলে সব কিছুর সুরাহা সম্ভব।” হরভজন বলেন, “সাক্ষীরা দেশের গর্ব। তাঁদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে দেখে কষ্ট হচ্ছে। আশা করব ওরা বিচার পাবে।” কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী ও অলিম্পিক পদকজয়ী শ‍্যুটার অভিনব বিন্দ্রা।

মিছিলে সামিল অমিত ভদ্র

এদিকে, বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটদের বিক্ষোভে উদ্বিগ্ন বিশ্ব কুস্তি সংস্থা। যে ভাবে কুস্তিগিরদের সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে তাতে ক্ষুব্ধ বিশ্ব কুস্তি সংস্থা। দীর্ঘ দিন ধরে ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনে নির্বাচনও হয়নি। এই দুই কারণে ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনকে বরখাস্ত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্ব কুস্তি সংস্থা।

কুস্তিগিরদের বিক্ষোভ নিয়েও বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ব কুস্তি সংস্থা। বলা হয়েছেন, ‘‘বিক্ষোভ দেখানোয় যে ভাবে কুস্তিগিরদের হেনস্থা ও পরে আটক করা হয়েছে তা দেখে আমরা উদ্বিগ্ন। এক মাসের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কুস্তিগিরেরা। সরকারের উচিত তাদের দাবি শোনা এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here