◆মোহনবাগান – ১ (সুহেল)
◆কালীঘাট এম এস – ১ (করণ)
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : ম্যাচের শেষ হওয়ার প্রায় ৪৫ মিনিট পর মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বলছিলেন,”বেশ কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করছি এখনকার দর্শকরা বদলে গেছে। ম্যাচ জিতলে তো দলের পাসে সমর্থকরা পাশে থাকেই। কিন্তু ব্যর্থ হলেও সমর্থকরা পাশে থাকছে। এটা বিরাট পরিবর্তন।” হয়তো দেবাশিসবাবু ঠিকই বলছেন। কিন্তু বড় দলের বিরুদ্ধে ছোট দলের ম্যাচে রেফারির পক্ষপাতিত্বর বদ অভ্যাস এখনও আছে। এই ব্যাপারে এতটুকু বদল হয়নি।

অতীতে যখনই তিন প্রধান ছোট দলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছে তখনই বড় ক্লাব গুলি রেফারির ‘আর্শীবাদ’ পেয়ে এসেছে। এটাই গড়ের মাঠের ফুটবলের দস্তুর। আজ, বুধবার নিজেদের মাঠে মোহনবাগান ও কালিঘাট এম এস ম্যাচে আবার তা প্রমাণিত। কালীঘাট যখন (২৮ মিনিট) এক গোলে এগিয়ে তখন ৪৪ মিনিটে রেফারি সুরজিৎ দাস মোহনবাগানকে একটি পেনাল্টি পাইয়ে দিলেন। আবার দ্বিতীয়ার্ধে কালীঘাটের সুদীপের ন্যায্য গোল বাতিল করে দিলেন রেফারি সুরজিৎ। তাঁর এমন সিদ্ধান্ত দেখে গ্যালারিতে উপস্থিত মোহনবাগান জনতারাও মুখ ঢেকে হাসছিলেন। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে আবার মোহনবাগানও একটি গোল করেছিল। কিন্তু অফসাইড দেখিয়ে সেই গোল বাতিল করেছিলেন রেফারি। আসলে পক্ষপাতদোষে দুষ্ট ম্যাচ খেলাতে গিয়ে গোলটি নাকচ করে লজ্জার মাত্রাটা কমানোর চেষ্টা মাত্র। ম্যাচ শেষে ম্যাচের ফলাফল ১-১। পিছিয়ে থেকে ড্র করল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। আরও পরিস্কার করে বলতে হয়, রেফারির ‘দানে’ কোনও রকমে মান বাঁচালো মোহনবাগান।

রেফারির এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চায়লে চার ব্যক্তিত্ব কি কি বললেন? মোহনবাগান কোচ বাস্তব রায় বলেন,”রেফারি নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। কারণ রেফারির বিষয়টা নিয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। যে বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ নেই সেই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য না করাই ভাল।”
কালীঘাট এম এসের কোচ পতম বাহাদুর থাপা বিরক্তির সঙ্গে বললেন,”ওদের পেনাল্টি ছিল কিনা অথবা আমাদের ন্যায্য গোল বাতিলের সিদ্ধান্ত ভুল না ঠিক তা আপনারা আর একবার রিপ্লে দেখে নিন। আপনারা বুঝে যাবেন। এই ভাবে যদি রেফারি ম্যাচ খেলায় তাহলে তো মহা সমস্যা!” আপনারা কি রেফারির বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদপত্র আইএফএতে জমা দেবেন? উত্তরে কোচ থাপা বলেন,”আমাদের ক্লাব কর্তারা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমি হতাশ,ফুটবলাররাও হতাশ।”

কালীঘাট এমএস ক্লাবের শীর্ষ কর্তা অজিত ব্যানার্জি আবার আইএফএ-এর সভাপতি। জঘন্য রেফারিং নিয়ে অজিতবাবু বললেন,”এই বিষয়ে আমার দুটি বক্তব্য আছে। প্রথমত, দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের যে গোলটা বাতিল করল সেটা মনে হয় ভুল সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয়ত,মোহনবাগান যে গোলটা করল তা অফসাইড দেখিয়ে বাতিল করে। এটা আসলে রেফারি ক্ষতিপূরণ দিলেন। পুরো বিষয় নিয়ে কালীঘাট এমএসের পক্ষ থেকে আইএফএকে চিঠি দেবো কিনা তা ভাবছি।”

মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্তকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,”এই ব্যাপারে তোমার প্রশ্নের উত্তর আমি দেব না।” প্রতিক্রিয়া জানার জন্য দ্বিতীয়বার অনুরোধ করতেই দেবাশিস দত্ত নিজের ডান হাতের আঙ্গুল নিজের ঠোটে রেখে আকার ইঙ্গিত করে এই প্রতিবেদককে চুপ থাকার নির্দেশ দিলেন।

এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই কালীঘাট এম এস ছিল দুরন্ত। গত তিন ম্যাচে মোহনবাগানের ফুটবলাররা যে ভাবে পাসিং ফুটবল খেলেছে সেই পাসিং ফুটবল আজ কালীঘাটের বিরুদ্ধে খেলতে পারেনি। শুরু থেকে মাঝমাঠটা দখল নিতে পারেনি মোহনবাগান। বরং কালীঘাটের ফুটবলাররা শারীরিকভাবে অনেক বেশি ফিট। বলকে ধাওয়া করে গেলেন সারাক্ষণ। কালীঘাটের দাপটে নিজেদের আসল খেলাটাই খেলতে পারেনি বাস্তবের ছেলেরা।

ম্যাচের ২৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে কালীঘাটকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন করণচাঁদ মুর্মু। ৪৪ মিনিটে বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে গোল করে মোহনবাগানকে সমতায় ফেরান সুহেল আহমেদ ভাট। দ্বিতীয়ার্ধে কালীঘাটের সুদীপ গোল করলে তা মোহনবাগানের জনৈক ফুটবলারের গোললাইন সেভ দেখিয়ে রেফারি সেই গোল নাকচ করে দেন। যা নিয়ে প্রচন্ড বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ৯২ মিনিটে মোহনবাগানের আকাশের লম্বা শট ধরে কালীঘাটের জালে বল বল ঢোকালে তা অফ সাইডের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই গোল বাতিল করেন রেফারি সুরজিৎ দাস।
এদিন ম্যাচের শেষে আইএফএ -এর নির্বাচিত ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হওয়া উমের মুথারকে দশ হাজার টাকার চেক তুলে দেয় মোহনবাগান।

এদিকে, প্রিমিয়ার ডিভিশনের অন্য ম্যাচে এরিয়ান ৪-০ গোলে হারাল খিদিরপুর স্পোর্টিং ক্লাবকে। মহম্মদ আমিরুল হ্যাটট্রিক করেছেন। জর্জটেলিগ্রাফ স্পোটাস ক্লাব ২-০ গোলে হারায় পুলিশ এসিকে। ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ ও রেলওয়ে এফসি ম্যাচ ২-১ গোলে শেষ হয়।