কার অঙ্গুলি হেলনে বালুরঘাট স্টেডিয়ামের সিড়ির নিচে পড়ে আছে সৌরভের মূর্তি?

    0

    সন্দীপ দে

    প্রায় চার বছর ধরে বালুরঘাট স্টেডিয়ামের সিড়ির নিচে পড়ে আছে ভারতের অন‍্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির মূর্তি। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়ামে (বালুরঘাট) ঢুকে সিড়ির কাছে গেলেই দেখা যাবে অবহেলায় পড়ে আছে ভারতীয় ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি সৌরভ গাঙ্গুলির ৮ ফুটের ফাইবারের মূর্তি। ভাবাই যায় না। ভারতে এই প্রথম বালুরঘাটেই সৌরভের কোনও মূর্তি বসানোর উদ‍্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

    ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার তৎকালীন সচিব গৌতম গোস্বামীর উদ‍্যোগে সৌরভ গাঙ্গুলির মূর্তি বসানোর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল। একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে নিজের মূর্তি উন্মোচনের জন‍্য বালুরঘাটে হাজির ছিলেন সৌরভ। নিজের জীবনে বহু বছর পর ট্রেনে করে বালুরঘাট গিয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক।

    প্রশ্ন হল, সৌরভ নিজের হাতেই তাঁর মূর্তি উন্মোচন করার তিন বছর পরেও কেন স্থায়ীভাবে বসানো গেল না? বালুরঘাট ও গঙ্গারামপুর এলাকার বেশ কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শাসক দলের কোনও এক প্রভাবশালী নেতার অঙ্গুলি হেলনেই নাকি সৌরভের মূর্তি স্থায়ী ভাবে বসানো যায়নি। কে সেই নেতা? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, গঙ্গারামপুর সাব ডিভিশনের এক ক্রীড়া সংগঠক ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে ফোনে বলছিলেন,” সেদিনের মূল অনুষ্ঠানের আগে সৌরভ গাঙ্গুলি গঙ্গারামপুরেও এসেছিলেন। আমরা তখনই জানতে পেরেছিলাম এই মূর্তি উন্মোচন হলেও বসানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আমরা যতদুর জানি শাসক দলের এক নেতা নাকি জেলা প্রশাসনকে বলে দিয়েছিলেন, যাতে সৌরভের মূর্তি স্থায়ী ভাবে না বসে। ওই নেতাকে সমর্থন করেছিলেন বালুরঘাটের দুই ক্লাবের দুই কর্তা। আমার নামটা লিখবেন না প্লিজ। রাজনীতির ব‍্যাপার। সবই তো বোঝেন। আমার ক্ষতি হয়ে যাবে।”

    মূর্তি উন্মোচন করতে সৌরভ যেদিন গঙ্গারামপুর ও বালুরঘাট গিয়েছিলেন সেই দিন তাঁকে দেখতে কার্যত গোটা দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষ ভিড় করেছিলেন। বালুরঘাটে পৌঁছে যখন সৌরভ জানতে পারলেন, তাঁর এই মূর্তি এখনই স্থায়ীভাবে বসানো যাবে না, তখন মঞ্চেই বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন তিনি। নিজের মূর্তি উন্মোচন করার পরে সৌরভ সংগঠকদের বলেছিলেন,”মূর্তি বসানো না গেলে আমার বেহালার বাড়িতে পাঠিয়ে দেবেন।”

    সৌরভের মূর্তি বসানোর ক্ষেত্রে যার মূল উদ‍্যোগ ছিল, সেই গৌতম গোস্বামী প্রচন্ড বিরক্ত। ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে গৌতম গোস্বামী বলছিলেন,”সৌরভ গাঙ্গুলি ভারতীয় ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি। বাঙালির গর্ব। বিশ্ব ক্রীড়ায় অনেক জীবন্ত কিংবদন্তি আছেন যাদের মূর্তি বসিয়ে সম্মান জানানো হয়েছে। আমরাও সৌরভকে সম্মান জানাতেই তাঁর মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ মূহুর্তে এক রহস‍্যজনক ভাবে মূর্তি স্থাপন করা গেল না। এটা শুধু বালুরঘাটের লজ্জা নয়, বাংলার ক্রীড়া জগতের লজ্জা, প্রশাসনিক ভাবেও লজ্জা। সৌরভ তো শুধু আমার একার নয়, সৌরভ সবার গর্ব। যা ঘটেছে তা সৌরভকে অপমানই করা হয়েছে।”

    ঠিক কি কারণে সৌরভের মূর্তি বসানো গেল না? কখন জানতে পেরেছিলেন যে মূর্তি বসানো যাবে না? এই প্রশ্নর উত্তর দিতে গিয়ে গৌতমবাবু গম্ভীরভাবে বলছিলেন,”যেদিন আমাদের মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠান তার ঠিক একদিন আগে জানতে পারলাম,সৌরভের মূর্তি বসানো যাবে না। আমাদের তখন জেলা শাসক ছিলেন সঞ্জয় বসু। অত‍্যন্ত ভদ্র মানুষ। তিনি আমাদের জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতিও ছিলেন। অনুষ্ঠানের একদিন আগে আমাকে ডেকে জানালেন, ‘সৌরভের মূর্তি বসানো যাবে না। আমি অনুমতি দিতে পারব না। কারণ জানতে চাইবেন না।’ আমি তখন সঞ্জয়বাবুকে বলি,এটা কি করে সম্ভব। কাল সকালেই সৌরভ বালুরঘাটে আসছেন। তাছাড়া আপনার অনুমতি তো অনেক আগেই নিয়েছি। এখন কি এমন ঘটল? ডিএম সাহেব শুধু বলেছিলেন, প্লিজ কারণ জানতে চাইবেন না। এখন মূর্তি উন্মোচন করুন। পরে দেখা যাবে। আন্দাজ করতে পেরেছিলাম, কেন সৌরভের মূর্তি বসানো গেল না। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।”

    একটি বিশেষ সূত্রের খবর, কোনও এক মন্ত্রীর নির্দেশেই নাকি ডিএম সঞ্জয় বসু, সৌরভের মূর্তি বসানোর অনুমতি দেননি? এটা কি ঠিক? উত্তরে গৌতম গোস্বামী বলেন,”আমি ঠিক জানি না। মূর্তি না বসার ঘটনার পর থেকে অনেকেই অনেক কথা বলেন। যার কোনও প্রমাণ নেই। কাজেই কি করে বলি যে অমুক নেতা বা মন্ত্রীর নির্দেশে এমনটা হয়েছে? তবে এটা বলতে পারি, মূর্তি না বসানোর নির্দেশ লিখিত ভাবে জানানো হয়নি।”

    দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান সচিব অমিতাভ ঘোষ ফোনে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে জানালেন,”সৌরভের মূর্তিটি আমাদের জেলা ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়ামেই আছে। এখনও বসানো যায়নি। অনেক বিতর্ক হয়েছে। আমরা নতুন করে কিছু ভাবনা চিন্তা করিনি। সব কিছু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। তারপর আমরা সবাই বসে আলোচনা করব।”

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here