কানমারি মহিলা ফুটবলারদের পাশে CSJC-বেনিয়ান ট্রি গ্রুপ

0

◆কানমারি ফুটবলারদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন বেনিয়ান ট্রি কর্ণধার প্রবীর রায় চৌধুরী ও কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের সভাপতি সুভেন রাহা◆

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : গ্রামের মহিলা ফুটবলারদের তুলে আনতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এল সিএসজেসি (কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাব)। কোনও গ্রামের মহিলা ফুটবলারদের জন‍্য এগিয়ে আসার চেষ্টা, সিএসজেসির ইতিহাসে প্রথম। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সঙ্গে আছে বেনিয়ান ট্রি গ্রুপ। গরীব পরিবার থেকে উঠে আসা প্রায় ৬০ জন মহিলা ফুটবলারদের ফুটবলের মূল স্রোতে ফেরানোর একটা প্রচেষ্টা।

কানমারি ফুটবলারদের সঙ্গে কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের প্রতিনিধি দল ও বেনিয়ান ট্রি কর্ণধার। শনিবার কানমারি গ্রামে

উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি ব্লকের ছোট্ট কানমারি গ্রাম। ঘাষহীন ছোট্ট মাঠে প্রায় ৬০ জন ফুটবলের তালিম নেয় কানমারি গ্রামেরই মেয়েরা। সবাই দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছে। তাদের বাবা-মায়েদের ভেরি,নদী,নালা থেকে মাছ ধরাটাই পেশা। একটা সময় এই সব মেয়েরা ঝুমুর গান গেয়ে কিছু উপার্জন করত। লকডাউনের সময় সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঝুমুর গান বন্ধ, স্কুল বন্ধ। বাড়িতে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। ঠিক তখনই স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক দেবরাজ মাহাতো গ্রামের মেয়েদের কাছে ফুটবল খেলার প্রস্তাব দেন। সঙ্গে সঙ্গে কানমারির গ্রামের বসে থাকা মেয়েরা ফুটবল খেলতে রাজি হয়ে যায়। এই গ্রামের চারিদিকে ভেরি তার মাঝখানে ছোট্ট একটা মাঠ। শুরু হয়ে গেল কানমারির মেয়েদের ফুটবল চর্চা। এসবই তিন বছর আগের ঘটনা।

শনিবার এক প্রদর্শণী ম‍্যাচে কানমারির ফুটবল দল

পরবর্তীকালে যোগাযোগ হয় বেনিয়ান ট্রি গ্রুপের কর্ণধার প্রবীর রায় চৌধুরীর সঙ্গে। তাঁর সাহায‍্য চেয়ে প্রস্তাব দেওয়া হল। প্রবীরবাবুর একটাই শর্ত ছিল, কানমারি গ্রামের মেয়েদের ফুটবলের উন্নয়নে তিনি পাশে থাকবেন,কিন্তু প্রত‍্যেক মেয়েকে স্কুল,কলেজে গিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। প্রবীর বাবুর শর্তে রাজি সবাই। তিন বছর আগে শুরু হল ‘কানমারি সোশ্যাল ফেয়ার ফুটবল অ‍্যাকাডেমি।’

ফুটবল তুলে দিচ্ছেন প্রবীর রায় চৌধুরী ও ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলার সৌভিক চক্রবর্তী

এই ফুটবল ক‍্যাম্পটি দেখতে শনিবার কানমারি পৌঁছে গিয়েছিল কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের ১২ জনের প্রতিনিধি। পৌঁছে গিয়েছিলেন বেনিয়ান ট্রি গ্রুপের কর্ণধার প্রবীর রায় চৌধুরীও। উপস্থিত ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলার সৌভিক চক্রবর্তী,শুভম সেন, তুহিন দাস। প্রাথমিক আলোচনার পর যেটা এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজন তা হল, ফুটবলারদের যথার্ত ট্রেনিং। অনুশীলনের পর ফুটবলাররা যাতে ভাল মানের খাবার পায় সেই ব‍্যবস্থাও করা হবে। এদিন কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাব ও বেনিয়ান ট্রি-এর পক্ষ থেকে কানমারি গ্রামের এই ক‍্যাম্পের ফুটবলারদের হাতে তুলে দেওয়া হল ট্রাক শ‍্যুট (আপার-লোয়ার)। আইএফএ সচিব অনির্বান দত্তর পাঠানো কিছু নতুন ফুটবলও মেয়েদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সন্দেশখালির কানমারি গ্রামের এই মহিলা ফুটবল ক‍্যাম্পের বিষয় জানানো হয়েছে আইএফএ সভাপতি অজিত ব‍্যানার্জির কাছেও। তিনিও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিনের অনুষ্ঠানে আন্তরিক ভাবে থাকতে চেয়েছিলেন আইএফএ সহসভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। ব‍্যক্তিগত কাজে আটকে যাওয়ায় তিনি হাজির থাকতে না পারলেও এই কানমারি গ্রামের ফুটবলারদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরূপও।

ফুটবলারদের জন‍্য CSJC এর দেওয়া ট্রাক শ‍্যুট

এই ক‍্যাম্পের পৃষ্ঠপোষক বেনিয়ান ট্রি কর্ণধার প্রবীর রায় চৌধুরী জানান,”এই গ্রামের মেয়েরা ফুটবল খেলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। ওদের চোখে অনেক স্বপ্ন। কিন্তু পরিকাঠামোগত অনেক সমস‍্যা আছে। ভাল মাঠ নেই। আমরা সেটা মাথায় রেখেছি। ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। আপাতত আমরা প্রাথমিকভাবে মেয়েদের উন্নতমানের ট্রেনিং ও অনুশীলনের পর ভাল খাবারের ব‍্যবস্থা করছি। সব কিছু ঠিক থাকলে মাঠও হবে। আমার একটাই শর্ত, খেলার সঙ্গে পড়াশোনাটাও করতে হবে। কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাব এগিয়ে এসেছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক। আশাকরি ভাল কিছু হবে।”

কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের সভাপতি সুভেন রাহা জানান,”এই ফুটবল ক‍্যাম্পের কর্তারা ভাল কিছু করার লক্ষ‍্যে এগিয়েছে। আমাদের ক্লাবের ১২জন সদস‍্য কানমারি এসে ক‍্যাম্পটি দেখে গেলাম। আমাদের সীমিত ক্ষমতায় যতটুকু পারি অবশ‍্যই এই মেয়েদের পাশে থেকে এগিয়ে নিয়ে যাব। কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। আশাকরি ভাল কিছু করতে পারব। তার জন‍্য সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। বেনিয়ান ট্রি গ্রুপ যেভাবে সাহায‍্য করছে তার জন‍্য কর্ণধার প্রবীর রায় চৌধুরীকে ধন‍্যবাদ জানাই। আজ থেকে এই কানমারি সোশ্যাল ফেয়ার অ‍্যাকাডেমির সঙ্গে আমরাও জুড়ে গেলাম।”

কানমারি সোশ্যাল ফেয়ার অ‍্যাকাডেমির সম্পাদক দেবরাজ মাহাতো বলেন,”বেনিয়ান ট্রি গ্রুপ আমাদের পাশে আছে। প্রবীরবাবু না থাকলে আমরা ফুটবলটাই চালাতে পারতাম না। এবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাব আমাদের পাশে দাঁড়ানোয় আমাদের উৎসাহ আরও বেড়ে গেল।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ক‍্যাম্প থেকে চার ফুটবলার এবারের কন‍্যাশ্রী কাপে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here