ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন, কলকাতা : বৃষ্টি মাথায় নিয়েও “ইনসাইড স্পোর্টস”-এর ডাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিলেন বাংলার ক্রীড়া জগতের এক ঝাঁক তারকা। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে এসেছিলেন বিভিন্ন জেলার ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতা প্রেস ক্লাবে যেন চাঁদের হাট। প্রাক্তন ক্রিকেটার ও সিএবি সচিব স্নেহাশিস গাঙ্গুলি, কোচ দেবু মিত্র, দীপক গড়গড়ি, অলিম্পিয়ান প্রণতি নায়েক, প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য,শিশির ঘোষ, শিশির ঘোষ, অমিত ভদ্র, ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার, এটিকে মোহনবাগানের ডিরেক্টর দেবাশিস দত্ত, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশেন ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত দত্ত, আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জি, বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্বপন (বাবুন) ব্যানার্জি থেকে রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সচিব কমল মৈত্র, রাজ্য ফুটবল অ্যাকাডেমির কোচ অনন্ত ঘোষ — কে নেই! “ইনসাইড স্পোর্টস”-র দুই ঘন্টার অনুষ্ঠানে কলকাতা প্রেস ক্লাবে তখন গোটা বাংলার ক্রীড়া জগৎ।
মঙ্গলবার ছিল “ইনসাইড স্পোর্টস”-র ‘খেল সম্মান’ ও শারদীয়া সংখ্যা প্রকাশ অনুষ্ঠান। এই মঞ্চেই ১৮ জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের পুরস্কৃত করল “ইনসাইড স্পোর্টস”।
যাঁরা নিঃশব্দে খেলোয়াড় তৈরি করেছেন, সেই কোচেদের “ক্রীড়াগুরু”-র সম্মান জানানো হল। প্রথম বছর চার কোচকে ‘ক্রীড়াগুরু’ সম্মান দেওয়া হল। তিন ফুটবল কোচ মুরারি শূর (উত্তর ২৪ পরগনা), দীপক গড়গড়ি (হুগলি), দুর্গাপদ গাঙ্গুলি (মুর্শিদাবাদ) ও ক্রিকেট কোচ দেবনারায়ণ (দেবু) মিত্রকে ‘ক্রীড়া গুরু’-র সম্মান দেওয়া হয়। যদিও শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি মুরারি শূর ও দুর্গাপদ গাঙ্গুলি। খুব শীঘ্রই তাঁদের বাড়িতে গিয়ে আমরা সম্মান জানিয়ে আসব।
এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগে যাঁদের সম্মান জানানো হল তা এই রকমঃ
◆ ‘জে সি গুহ’ স্মৃতি পুরস্কার — কল্যাণ মজুমদার (সচিব ইস্টবেঙ্গল ক্লাব)
◆ ‘প্রদ্যোৎ দত্ত’ স্মৃতি পুরস্কার — গৌতম গোস্বামী (সেরা সংগঠক, জেলা/ দক্ষিণ দিনাজপুর)
◆’অশোক ঘোষ’ স্মৃতি পুরস্কার — কমল মৈত্র (সেরা সংগঠক, রাজ্য অ্যাথলেটিক্স)
◆ ‘খেল সম্মান’ –প্রবীর ভট্টাচার্য ( ১৯ বছর ধরে জঙ্গল মহলের ফুটবল নিয়ে কাজ করেছেন)
◆ ‘খেল সম্মান’ — উজালা কুমারী সিং (বাংলা অ্যাথলেটিক্সের অন্যতম প্রতিভা)।
◆ ‘খেল বন্ধু’ পুরস্কার — চিত্তরঞ্জন দাস (এই লকডাউনে তিন জন রেফারিকে চাকরি দিয়ে তিন পরিবারের সংসার বাঁচিয়েছেন।)
◆ ‘খেল সম্মান’ — স্নেহাশিস গাঙ্গুলি (প্রাক্তন রনজি ক্রিকেটার ও সচিব সিএবি)
◆ ‘খেল সম্মান’ — প্রণতি নায়েক (অলিম্পিয়ান, জিমন্যাস্টিক্স)
◆’খেল সম্মান’– বিধান মল্লিক (ক্যারাটে)
◆’খেল সম্মান’– অভিষেক ডালমিয়া (সভাপতি, সিএবি)
◆ ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ — সুব্রত দত্ত, (সহসভাপতি, এআইএফএফ)
◆ লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট — শিশির ঘোষ (প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার)
◆লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট – সুব্রত ভট্টাচার্য (প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার)
◆ ‘সমাজ বন্ধু’ পুরস্কার –ডঃ শুভাশিস মিত্র (ক্রীড়া প্রেমী ও সমাজসেবী)
এদিনের অনুষ্ঠানে দুই ছাত্র নিজের গুরুকে স্মারক তুলে দিয়ে সম্মান জানালেন স্নেহাশিস গাঙ্গুলি ও শিশির ঘোষ। সৌরভ গাঙ্গুলি ও স্নেহাশিস গাঙ্গুলির ছোট বেলার কোচ হলেন দেবনারায়ণ (দেবু) মিত্র। গুরুকে সম্মান জানানোর সুযোগ পেয়ে আপ্লুত স্নেহাশিস বলেন,”ইনসাইড স্পোর্টস’-র জন্য আজ আমি গুরুকে কাছে পেয়ে সম্মান জানাতে পারলাম। অসাধারণ অনুভুতি।”
নিজের ছোট বেলার কোচ দীপক গড়গড়িকে স্মারক তুলে দেন শিশির ঘোষ। “এমন মূহুর্ত কখনও আসবে ভাবিনি। আজ যারা পুরস্কার পেলেন তারা প্রত্যেকেই যোগ্য। ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-সম্পাদক সন্দীপ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। সন্দীপের এই চেষ্টাকে প্রশংসা করতেই হয়।”
দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে আসা সেরা ক্রীড়া সংগঠক গৌতম গোস্বামী বলেন,’ খেলাধূলায় কলকাতা শহর ও শহরতলীকেই পশ্চিবঙ্গ ভাবা হত। এর বাইরেও যে খেলাধূলা হয়, সেটাও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে -এটা নিয়েই আমার আন্দলন ছিল। আজ ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ সেটাই করে দেখাল। কলকাতার পাশাপাশি জেলার খেলা, ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের যেভাবে সামনে এনে তুলে ধরছে তার প্রশংসনীয়। সমস্ত জেলাকেও সম্মান জানাল।”
জে সি গুহ স্মৃতি পুরস্কার পাওয়ার পর ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার বলছিলেন, “আমি যখন হাপ প্যান্ট পড়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে মাঝে মধ্যে খেলা দেখতে যেতাম, তখন দুর থেকে জে সি গুহকে দেখতাম। আজ ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ যখন সেই বরেণ্য জে সি গুহর নামে আমাকে পুরস্কার দিচ্ছে, তখন মনে হচ্ছে এটার পাওয়ার যোগ্য আমি হয়তো নই”।
প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার অমিত ভদ্রর পরামর্শ,”এই ধরণের পুরস্কার প্রদান প্রত্যেক বছর করুক। ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ যে ভাবে জেলাকে গুরুত্ব দিচ্ছে তা দেখে আমি সত্যিই খুশি।”
আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন,”ইনসাইড স্পোর্টস’ মানেই খেলার ভিতরের খবর। যেটা খুব ভালভাবেই তুলে ধরছে। কখনও সখনও সমালোচনা মানতে খারাপ লাগে। কিন্তু এই সমালোচনা থেকেও আমরা নিজেদের শুধরে নিতে পারব। ভাল উদ্যোগ। আমার শুভেচ্ছা রইল।”
এটিকে মোহনবাগানের অন্যতম ডিরেক্টর দেবাশিস দত্ত বলেন,” চার বছর আগে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ শুরু করার আগে সন্দীপ আমার কাছে এসেছিল। সন্দীপকে আমি বহু বছর ধরে চিনি। ওকে তখন বলেছিলাম, সমালোচনা করবে ঠিক আছে। সেটা যেন গঠন মূলক সমালোচনা হয়। পাশাপাশি খেলাধূলার ইতিবাচক দিকটাও তুলে ধরতে হবে। ভাল লাগছে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ সেই কাজটাই ভালভাবে করছে।”
বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্বপন (বাবুন) ব্যানার্জি বলেন,’ইনসাইড স্পোর্টস’ জেলার ছোট খবর গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরে। এটা আমার খুব ভাল লাগে। আমাদের উচিত ইনসাইড স্পোর্টসের পাশে থাকা।”
লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্টের স্মারক হাতে নিয়ে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সহ সভাপতি ও আইএফএ-এর চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত বলেন,”ইনসাইড স্পোর্টস’-র কর্ণধার সন্দীপকে বহু বছর থেকে চিনি,জানি। নিজের চাকরি ছেড়ে, নানান প্রতিকুলতার মধ্যেও ও একাই নতুন একটা মিডিয়া হাউস খুলতে পেরেছে। অসম্ভব মনের জোর না থাকলে এটা করা যায় না। খবর প্রকাশের ক্ষেত্রেও নির্ভিক। ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর সাফল্য কামনা করছি।”
এদিন,গুনিজনদের সম্মান জানানোর পাশাপাশি প্রকাশিত হল “ইনসাইড স্পোর্টস”-র শারদীয়া সংখ্যাও। এখন থেকে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ ম্যাগাজিনের সঙ্গে নিউজ পোর্টাল ও ইউটিউব চ্যানেলেও এসে গিয়েছে। নিউজ পোর্টাল ও ইউটিউবে নিয়মিত ইনসাইড স্পোর্টস। করোনা,লকডাউনের কারণে বেশ কয়েক মাস ম্যাগাজিনটা বন্ধ ছিল। শারদীয়া সংখ্যা দিয়ে ফের শুরু হল। এবার নভেম্বর মাস থেকে, নিয়মিত প্রকাশ পাবে বাংলার একমাত্র ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ ম্যাগাজিন।