ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : ময়দানের সমস্ত ক্লাবের কর্তাদের নিয়ে প্রতি বছর বড় উৎসব করতে দেখা যায় জর্জ টেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাবে। সুব্রত দত্তর উদ্যোগে প্রতি বছর দুর্গা পুজোর পর ময়দানের জর্জ টেলিগ্রাফ ক্লাব তাঁবুতেই হয় বিজয়া সম্মিলনী। স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাজির হন ময়দানের প্রায় সমস্ত ক্লাবের কর্তারা। এবার জর্জের বাইরেও ময়দানের জোড়াবাগান ক্লাবের কর্তা শঙ্কর দাস ময়দানের ক্লাব কর্তাদের নিয়ে করলেন নতুন বর্ষবরণ উৎসব।
সোমবার সন্ধ্যায়, মেসারার্স ক্লাবের পাশে টেনিস কোর্টে এই বর্ষবরণ উৎসবে কে না এসেছিলেন! আইএফএ-র চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত, সভাপতি অজিত ব্যানার্জি, সচিব জয়দীপ মুখার্জি থেকে সিএবির সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া, সচিব স্নেহাশিস গাঙ্গুলি, কোষাধ্যক্ষ দেবাশিস গাঙ্গুলি, বিশ্বরূপ দে হাজির ছিলেন। এদিন, আইএফএ -র গভর্নিং বডির বৈঠক হওয়ার পর সন্ধ্যায় এই বর্ষবরণ উৎসবে সুব্রত দত্তর সঙ্গে আসেন জয়দীপও। এদিন এই উৎসবে ছোট-বড় ক্লাব কর্তাদের জটলায় একটাই আলোচনার বিষয় ছিল, নিজেই গভর্নিং বডির সভা ডেকে পদত্যাগ পত্র প্রত্যাহার করলেন জয়দীপ। কেন করলেন? এতে জয়দীপের সম্মান আরও কি কমল না? আইএফএ-র ইতিহাসে খুব খারাপ দৃষ্টান্ত নয়? জয়দীপকে নিয়ে এমন হাজার প্রশ্ন ভেসে আসছিল।
তবে জয়দীপ উৎসবে চুপচাপ ছিলেন। বেশি কথা বলছিলেন না। ডিনার করেই বেড়িয়ে গেলেন সুব্রত দত্তর সঙ্গে।
তাঁরা চলে যাওয়ার পর আসেন আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানার্জি। তিনি প্রায় আধ ঘন্টা ছিলেন।
যার উদ্যোগে এই বর্ষবরণ উৎসব সেই শঙ্কর দাস হলেন জোড়াবাগান ক্লাবের শীর্ষ কর্তা। জানা গেল, ময়দানের সকল ক্লাব কর্তাদের নিয়ে গেট টুগেদার অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন হাওড়া ইউনিয়নের শান্তি চৌধুরী। বেশ কয়েক বছর আগে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বিরোধী গোষ্ঠীর কিছু কর্তারা মিলিত হয়ে এই ধরনের উৎসব অনুষ্ঠান করতেন। যার মাথা ছিলেন শান্তি চৌধুরী। আর আর্থিক পৃষ্ঠপোষক ছিলেন স্বরোজ ব্যানার্জি। ময়দানে তখন দুই রকম কথা শোনা যেত। কেউ কেউ বলতেন দত্ত পরিবারের প্রতিপক্ষ গোষ্ঠী হিসেবে শান্তি চৌধুরী ক্লাব কর্তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রত্যেক বছর এই ধরনের উৎসব করতেন। আবার কেউ বলে থাকেন, শান্তি চৌধুরীর গোষ্ঠী ছিল দত্ত পরিবারের “ক্রিয়েটেড অপোনেন্ট গ্রুপ।” উৎসবটা ছিল নিছকই এক আনন্দ সন্ধ্যা কাটানো মাত্র। ময়দানে নানা মুনির নানা মত।
হঠাৎ করে এই করোনার সময় কেন এত বড় করে উৎসব করতে গেলেন? শঙ্কর দাস “ইনসাইড স্পোর্টস” কে পরিস্কার জানালেন,”দেখো ভাই, শান্তিদার মৃত্যুর পর আমরা কয়েকজন দায়িত্ব নিয়ে এই উৎসব করি। ২০১৯ সালেও করেছিলাম। পরের বছর লকডাউন থাকায় করিনি। এবার একটু বড় করেই করে ফেললাম। এটা জাস্ট একটা আনন্দ সন্ধ্যায় এক সঙ্গে কাটানো। যতটা সম্ভব করোনা বিধি মেনেই আমরা এই উৎসব করতে পেরেছি। সবাই এসেছে, এটা দেখে খুব খুশি হয়েছি।”
করোনা সংক্রমন বাড়ছে তবু বিভিন্ন ক্লাব কর্তারা এসেছিলেন। শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব খিদিরপুর ক্লাবের শীর্ষ কর্তা সিদ্ধার্থ বিশ্বাস, ইউনাইটেড স্পোর্টসের সচিব অলোকেশ কুন্ডু থেকে উয়াড়ীর ফুটবল সচিব ইন্দ্রনাথ পাল, পোর্ট ট্রাস্টের শুভাশিসবাবু, সাদার্ন সমিতির সচিব সৌরভ পাল সহ একঝাঁক ক্লাব কর্তরা। উপস্থিত ছিলেন আইএফএ-র সকল স্টাফরাও।
ময়দানের সুন্দর হাওয়া, যথেষ্ঠ বড় জায়গায় অনুষ্ঠিত এই উৎসবে অতিথিদের খেতে কোনও অসুবিধা হয়নি। কচুরি, ছোলার ডাল, পোলাও, মাছ, মাংস, ফিস ফ্রাই, মিস্টি, আইসক্রিম খেয়ে বাড়ি ফেরার আগে কর্তাদের মধ্যে আরও একটা প্রশ্ন চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। যেটা নিয়ে ময়দানে তাঁদের সংসার সেই ফুটবল লিগ এবার হবে তো? ততক্ষনে রাজ্য সরকার সমস্ত স্কুল ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে। শিয়ালদহ শাখার বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করে দিয়েছে। শুধু করোনার জন্য। নতুন দল গড়ার জন্য অনেক ক্লাব ট্রায়াল স্থগিত রেখেছে। তাহলে কি এবারও কলকাতা ফুটবল লিগ হবে না? পোলাও, মাংস খেলেন বটে, কিন্তু একরাশ আশঙ্কা নিয়ে বর্ষবরণ উৎসব থেকে বাড়ি ফিরলেন ময়দানের অধিকাংশ কর্তারা।