সন্দীপ দে
ইস্টবেঙ্গল এবং ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্টের সম্পর্ক ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর ধারণ করেছে। দেবব্রত সরকাররা টার্মসিটে সই করছেন না। আর শ্রী সিমেন্ট পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে, “আগে সই পরে আলোচনা।” গত দুই দিনে লগ্নিকারীরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, নতুন করে ইস্টবেঙ্গলকে আর কোনও চিঠি পাঠাবে না। আর কয়েকটা দিন দেখবে, যদি ইস্টবেঙ্গল সই না করে তাহলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সব জানিয়ে চলে যাবে।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে সমস্যা মেটানোর জন্য আসরে নামলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন অধিনায়করা। উদ্যোগ নিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন অধিনায়ক সুমিত মুখার্জি। গত সোমবার বিকেলে বৃষ্টি মাথায় করে শ্রী সিমেন্টের কলকাতা প্রতিনিধি শ্রেনিক শেঠের বাড়ি গিয়ে দেখা করেছেন তিন প্রাক্তন অধিনায়ক মিহির বসু, গৌতম সরকার এবং সুমিত মুখার্জি। তাঁদের অনুরোধ ছিল, ইনভেস্টর-ক্লাবের ইগো সমস্যা থাকতে পারে, চুক্তির নানান জটিলতা থাকতে পারে। কিন্তু সব থেকে বেশি ক্ষতি হচ্ছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের। তারা আইএসএল খেলবে না, ভাবতেই পারছেন না অধিনায়করা। উভয়পক্ষ এক সঙ্গে আলোচনার মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে ক্লাব যাতে আইএসএলে খেলুক সেই বিষয়টা যেন দেখা হয়। প্রায় আড়াই ঘন্টার আলোচনা হয়। শ্রেনিক শেঠও তাঁদের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখা করে প্রাক্তনদের বোঝান। সমস্যা মেটার কোনও ইতিবাচক দিক উঠে আসেনি। সমস্যা সমাধানের একটাই রাস্তা, আগে সই করতে হবে।
সমস্যা মেটানোর জন্য যিনি সব থেকে বেশি উদ্যোগী, ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন অধিনায়ক সুমিত মুখার্জি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে জানান,”আমরা ইস্টবেঙ্গলে খেলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছি। আমার মনে হয়েছে, ক্লাব ও ইনভেস্টরের এই কঠিন সমস্যায় আমাদেরও এগিয়ে আসা উচিত। আমি নিজে মনাদা (মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য), ভাস্করদা (গাঙ্গুলি), বিকাশ পাঁজি, পিন্টুদা (সমরেশ রায় চৌধুরী,গৌতমদা (সরকার), মিহিরদা (বসু) সহ বহু ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়কদের ফোন করে সমস্যা সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেছি। মূলত তাঁদের মত নিয়েই শ্রেনিকবাবুর সঙ্গে সভায় গিয়েছিলাম। আমরা চাই সমস্যা মিটিয়ে ইস্টবেঙ্গল আইএসএলে খেলুক।”
আপনারা তো সেই আলোচনার মধ্যেই সমস্যা সমাধানের কথা বলছেন। যা একই কথা বলে আসছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার। তারমানে কি আমরা ধরে নেব, আপনারা অর্থাৎ উদ্যোগী অধিনায়কেরা দেবব্রত সরকারের দূত হিসেবেই শ্রী সিমেন্টের কলকাতা প্রতিনিধি শ্রেনিক শেঠের সঙ্গে দেখা করলেন?
উত্তরে সুমিত মুখার্জি
বললেন,”একদম না। আপনাকে পরিস্কার করে জানিয়ে রাখছি, আমরা ইস্টবেঙ্গল বা শ্রীসিমেন্ট – কারও পক্ষের হয়ে আলোচনায় বসিনি। পরিস্তিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইস্টবেঙ্গল কোনও টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে না, এমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়। ফুটবলার হিসেবেই আমরা শ্রেনিক শেঠের কাছে গিয়েছিলাম। আর আপনি জানেন, শ্রীসিমেন্টের কর্ণধার মিস্টার বাঙ্গুর অনেক আগেই বলে দিয়েছেন যে, তারা আলোচনায় বসবেন না। আগে সই তারপর আলোচনা। আমরা নিরপেক্ষ ভাবে বসতে চেয়েছিলাম বলেই তো ওঁরা যথাযথ সম্মান দিয়েই আলোচনায় বসলেন। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা আগেই করে নিয়েছি যে, এই ইস্যুতে যারা নিরপেক্ষ একমাত্র তারাই এগিয়ে আসুন।”
ইস্টবেঙ্গলের আর এক প্রাক্তন অধিনায়ক মিহির বসু ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে জানান,”শ্রেনিক শেঠ আমার পূর্ব পরিচিত । আমরা ওর কাছে গিয়েছিলাম ঠিকই। অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ওরা তো বলছে আগে সই করুক। তারপর ক্লাবের আপত্তি গুলো অবশ্যই বিবেচনা করবেন। সমস্যাটা তো বিরাট জায়গায় পৌঁছেছে। কিন্তু সমস্যা মেটাতে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। ইস্টবেঙ্গল ফুটবলে থাকুক, আইএসএলে থাকুক।”
সোমবার যে তিন প্রাক্তন অধিনায়ক শ্রীসিমেন্টের প্রতিনিধি শ্রেনিক শেঠের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন তাদের মধ্যে এক প্রাক্তন (নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ) ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে জানালেন,”প্রাথমিক চুক্তি ও টার্মসিটের যা বয়ান তা নিয়ে বেশিদুর লড়াই করতে পারবে না ইস্টবেঙ্গল। সেদিক দিয়ে শ্রীসিমেন্ট ভাল জায়গায় আছে। কিন্তু এমন কিছু ক্লজ আছে যা সত্যিই চিন্তার বিষয়। এই ক্লজ প্রাথমিক চুক্তিতেও ছিল। তখন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা কেন সই করেছিলেন? না দেখে সই করেছিল? অবাক হচ্ছি।”
সূত্রের খবর, ‘আগে সই, পরে আলোচনা’ – বাঙ্গুরের এই কথায় পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছেন না ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। সই করার পর যদি তাদের আপত্তি না শোনা হয়? শ্রীসিমেন্টের পক্ষ থেকে জানা গেল, প্রাক্তন অধিনায়করা নাকি একটা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, শ্রীসিমেন্টের পক্ষ থেকে, প্রাক্তন অধিনায়কদের লিখিত দেওয়া হোক, যাতে সই করার পর ক্লাব কর্তাদের আপত্তি গুলো বিবেচনা করে দেখবেন। তাহলে ক্লাব কর্তারাও নিশ্চিত থাকতে পারেন। কিন্তু শ্রীসিমেন্টের কর্তা জানান, কর্পোরেট কোম্পানিতে এভাবে কোনও লিখিত দেওয়ার নিয়ম নেই। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে বিশ্বাস করতেই হবে। এছাড়া আর কোন পথ নেই। অধিনায়কদের সঙ্গে আলোচনায় , ইনভেস্টরের প্রতিনিধি প্রশ্ন তোলেন, তারা ক্লাবের কার সঙ্গে আলোচনা করবেন? নতুন কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টর কমিটিতে ইস্টবেঙ্গলের থেকে দুই জনের নাম পাঠাতে বলা হয়েছিল। একাধিকবার বলা সত্বেও নাম পাঠানো হয়নি। আজ যদি দুই সদস্যর নাম পাঠাত তাহলে সেই দুই সদস্যর সঙ্গে আলোচনায় বসা যেতে পারত।
পরে তিন প্রাক্তন অধিনায়কদের যথাযথ সম্মান জানিয়েই বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন শ্রেনিক শেঠ। তিনি তাঁদের বোঝাতে পেরেছেন। এবার এই এই তিন প্রাক্তন অধিনায়ক ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের সঙ্গেও আলোচনায় বসতে চান।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ফুটবল মাঠের জন্য এটিকে মোহনবান নাকি রাজারহাট নিউ টাউনের দিকে ১৫ একর জমি কিনেছেন। শ্রীসিমেন্টও নাকি কলকাতা শহরের আশে পাশে ফুটবল মাঠের জন্য জমি কেনার কথা ভেবে রেখেছে। কথা ছিল, এবারের আইএসএলের জন্য প্রি-কন্ডিশনিং ক্যাম্প করা হবে ইংল্যান্ডে। তার প্রাথমিক ব্যবস্থাও নাকি করে রেখেছিল শ্রীসিমেন্ট। ক্লাব তাঁবুতে কর্পোরেট লুক আনতে খোলনলচে বদলে ফেলার নকশাও তৈরি করা হচ্ছিল। কিন্তু সই না হওয়ায় সব পরিকল্পনা বিশবাঁও জলে।