◆সন্দীপ দে◆
এটিকে মোহনবাগানের আচরণে অপমানিত,ক্ষুব্ধ এবং প্রচন্ড বিরক্ত আইএফএ। শনিবারের আইএসএলের ডার্বি ম্যাচের টিকিট নিয়ে মোহনবাগান যে অসৌজন্য দেখিয়েছে তাতে আইএফএ সহ একাধিক ক্লাব প্রচন্ড বিরক্ত। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, শেষ মুহূর্তে এটিকে মোহনবাগান যে ‘সৌজন্য’ -র টিকিট পাঠিয়েছিল তা ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত।
ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার দুপুরের পর। ডার্বি ম্যাচের টিকিট পৌঁছেছে কিনা তা বিভিন্ন ক্লাব কর্তারা আইএফএতে ফোন করে খোঁজ নিতে থাকেন। আইএফএ সূত্রের খবর, দুপুর আড়াইটের সময় আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত সরাসরি যোগাযোগ করেন এটিকে মোহনবাগানের কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে। অনির্বান গোয়েঙ্কাকে জানান, আইএফএ এখনও পযর্ন্ত কোনও টিকিট পায়নি। কিছুক্ষণের মধ্যে এটিকে মোহনবাগানের পক্ষ থেকে আইএফএতে টিকিট পাঠায় এটিকে মোহনবাগান। মজার ব্যাপার হল, যে টিকিট পাঠানো হয়েছিল তা শুধু আইএফএ-র গভর্নিং বডির সদস্য ও অফিস বেয়ারার্সদের জন্য। তা দেখে চমকে ওঠেন আইএফএ সচিব সহ অন্য কর্তারা। মুহুর্তের মধ্যে অফিস বেয়ারার্সদের সঙ্গে কথা বলে আইএফএ সচিব অনির্বান টিকিট পাওয়ার জন্য সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে এটিকে মোহনবাগানকে অনির্বান জানিয়ে দেন,আইএফএতে তিনশোর বেশি ক্লাব আছে। তাদের যখন ডার্বির টিকিট দেওয়া যাচ্ছে না তখন জিবি মেম্বার ও অফিস বেয়ারার্সরা এই টিকিট গ্রহণ করতে পারছেন না। তাই তিনি এই টিকিট বিনয়ের সঙ্গে ফেরত পাঠাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এবারের আইএসএলের প্রথম লেগের ডার্বি ম্যাচের হোম ম্যাচ এটিকে মোহনবাগানের। স্বাভাবিক ভাবেই ম্যাচের যাবতীয় আয়োজন করছেন সবুজ-মেরুন ক্লাব কর্তারা। যে ক্লাবই ম্যাচ আয়োজন করুক না কেন, তারা আইএফএকে পর্যাপ্ত সংখ্যায় টিকিট পাঠায়। যদিও এই টিকিট পাঠানোটা কোনও নিয়মের মধ্যে পড়ে না। এটা একটা সৌজন্য, রীতি। এই টিকিট ৩০৯ টি ক্লাবকে ভাগ করে দেয় আইএফএ। যাতে ছোট দলের ক্লাব কর্তারা তাদের দলের কিছু ফুটবলারদের টিকিট দিতে পারেন। এটাই হয়ে আসছে। এবার টিকিট না পাঠিয়ে আতীতের সেই রীতি,সৌজন্যবোধ দেখালো না এটিকে মোহনবাগান। ময়দানের একাধিক ক্লাব কর্তা থেকে আইএফএ-র অভিজ্ঞ কর্তারা জানাচ্ছেন, এমন ঘটনা আইএফএ-র ইতিহাসে প্রথম ঘটল।
শুক্রবার বহু ক্লাবের বহু কর্তা ডার্বি ম্যাচের টিকিটের আশায় আইএফএতে এসেছিলেন। মোহনবাগান তাদের জন্য কোনও টিকিট পাঠায়নি শোনার পর হতাশায় ফিরে গিয়েছেন। কয়েকজন তো কর্তা হতাশার সঙ্গে বলছিলেন,”এই ম্যাচটার জন্য ফুটবলার থেকে পাড়ার পরিচিতরা টিকিট চেয়ে থাকে। তাদের কি বলব? এত বছর ধরে ফুটবল মাঠ করে একটা ডার্বি ম্যাচের টিকিট দিতে পারছি না। এর থেকে লজ্জার কি আছে।”
নমুনা আরও আছে। টিকিটের জন্য দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব অমিতাভ ঘোষ এসেছিলেন আইএফএ সচিবের কাছে। তিনি শুনলেন মোহনবাগান টিকিট পাঠায়নি। তাই খালি হাতে ফিরলেন।
এই প্রতিবেদকের সামনে আইএফএ-এর এক অভিজ্ঞ স্টাফ সচিবকে জিজ্ঞাসা করলেন,”প্রাক্তন ফুটবলার অলোক মুখার্জি একটি টিকিট চেয়েছেন। কি বলব?”
তৃতীয় ডিভিশনের এক ক্লাব কর্তা তখনও টিকিটের আশায় বসে আছেন। তার কাছে একটি টিকিটের আব্দার করে ফোন এল আর এক প্রাক্তন ফুটবলার রঞ্জন দে-র। সেই কর্তাটি বললেন,’টিকিট পাইনি। সরি রঞ্জন।” পরে সেই কর্তাটি জানালেন, রঞ্জন দে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে ফোন করেও (রাত সাড়ে নটা পযর্ন্ত পাওয়া খবর) টিকিট পাননি।
শুক্রবার আইএফএ অফিসে এমন টুকরো টুকরো ঘটনার কোলাজ দেখলে মন খারাপ হতে বাধ্য। শুধু একটি টিকিটের জন্য তীব্র হাহাকার।
প্রশ্ন উঠছে,আয়োজক ক্লাবের এই টিকিট না পাঠানোর সিদ্ধান্ত কার? ময়দানের একটা বড় অংশ মনে করছে, এই সব বিষয়ে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার মাথা ঘামানোর সময় নেই। তিনি এতটা সংকীর্ণ মানসিকতার মানুষ নন বলেই মনে করেন আইএফএ-এর একাধিক কর্তারা। তাহলে কার অঙ্গুলি হেলনে এই ‘অসৌজন্য’ দেখানো হল? কার জন্য তিন শতাধীক ক্লাব ডার্বি ম্যাচের টিকিট পাওয়া থেকে বঞ্চিত হল? এই প্রশ্নই উঠছে।
আপনি কেন টিকিট ফেরত পাঠালেন? ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর প্রশ্নের উত্তরে আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত বললেন,”দেখুন, মিস্টার গোয়েঙ্কাকে জানাননোর পর তিনি টিকিট পাঠিয়েছিলেন। তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্ত শুধু গভর্নিং বডির সদস্য ও অফিস বেয়ারার্সরা টিকিট নেবে আর বাকি তিনশো ক্লাব টিকিট পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে এটা মানতে পারিনি। ভুলে গেলে চলবে না, এই সব ক্লাব নিয়েই কিন্তু আইএফএ। তাদের যখন টিকিট দিতে পারব না তখন আমাদের মতো মুষ্টিমেয় কর্তাদের টিকিট নেওয়ার অধিকার থাকে কি?”