ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,আলিপুরদুয়ার : উত্তরবঙ্গ কাপ ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলা। ম্যাচ শেষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। গালাগালি থেকে মারামারি – পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। এক দল আরেক দলের ড্রেসিংরুমে ঢুকে ফুটবলারদের পেটাচ্ছে, তাও আবার আইএফএ ও আলিপুরদুয়ার জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তাদের সামনে। ভাবা যায় না। এই ঘটনা বুঝিয়ে দিয়ে গেল, উত্তরবঙ্গ কাপ সংগঠনে আইএফএ ডাহা ফেল।
রবিবার আলিপুরদুয়ারে উত্তরবঙ্গ কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল মুর্শিদাবাদ পুলিস ক্লাব ও কালিমপংয়ের জর্জিয়ান ফুটবল অ্যাকাডেমি। ঘটনার সূত্রপাত, ম্যাচের ৭৫ মিনিটের পর। মুর্শিদাবাদ পুলিশ দলের এক ফুটবলার ফাউল করে। রেফারি সেই ফুটবলারকে লালকার্ডও দেখান। তার পরও থেকেই জর্জিয়ান ফুটবল অ্যাকাডেমির ফুটবলাররা উত্তেজিত হয়ে যায়। খেলার মধ্যে চলতে থাকে চোরাগোপ্তা মার। প্রভাবিত হতে থাকে জর্জিয়ানের সমর্থকরাও। ম্যাচে মুর্শিদাবাদ পুলিশ দল ৩-২ গোলে জর্জিয়ানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। অভিযোগ, তারপর থেকে মাঠে গন্ডগোল শুরু হয়ে যায়। জর্জিয়ান ফুটবল অ্যাকাডেমির ফুটবলাররা তেড়ে মারতে যায় চ্যাম্পিয়ন দল মুর্শিদাবাদ পুলিশ দলের ফুটবলারদের। রানার্স জর্জিয়ানের ফুটবলারদের আক্রমনাত্মক মেজাজ দেখে মুর্শিদাবাদের ফুটবলাররা ছুটে ড্রেসিংরুমে ঢুকে যায়। তাতেও নিস্তার মেলেনি। জর্জিয়ানের কিছু ফুটবলার ও সমর্থক তাদের ধাওয়া করে মুর্শিদাবাদের ফুটবলারদের মারতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ততক্ষনে স্থানীয় দর্শকরাও কালিপংয়ের দর্শকদের গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়ে। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জর্জিয়ান ফুটবলাররা অটো করে টিম হোটেলে পালিয়ে যায়। র্জিয়ান ফুটবলারদের হামলায় মুর্শিদাবাদ পুলিশ দলের ৫ ফুটবলার আহত হয়েছেন। দুই ফুটবলারের মাথা ফেটেছে। আরও দুই ফুটবলারের পায়ে চোট এবং এক ফুটবলারের মুখ ফেটে যায়। এ সবই ঘটল আইএফএ ও আলিপুরদুয়ার জেলা কর্তাদের সামনে। আইএফএ প্রথম থেকেই দায়সারা গোছের মনোভাব নিয়ে উত্তরবঙ্গ কাপ করছে। তাদের সাংগঠনিক দিকটা যে কতটা দুর্বল তা রবিবার ফাইনালে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল।
আইএফএ ফুটবলারদের নিরাপত্তার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে পারেনি কেন? প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গ কাপের পুরো দায়িত্বে ছিলেন আইএফএ-র সহ সভাপতি তনুময় বসু। তিনি “ইনসাইড স্পোর্টস”-কে বললেন, “দেখো, ফুটবল মাঠে গন্ডগোল হতেই পারে। সে তো মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচেও হয়। আমরা মাঠে ছিলাম। পুলিশের সাহায্যে সব সামলে নিতে পেরেছি। এটা অন্যভাবে দেখা ঠিক নয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর কালিমপং জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব মিলন সুব্বা ক্ষমা চেয়েছেন।”
আলিপুরদুয়ার ক্রীড়া সংস্থার সচিব সঞ্চয় ঘোষ মাঠেই সাংবাদিকদের জানান,”আজ কালিমপংয়ে ফুটবলাররা যা করল তার তীব্র নিন্দা করছি।”
পুরো ঘটনায় প্রচন্ড বিরক্ত মুর্শিদাবাদ পুলিশ ক্লাবের ম্যানেজার অনিমেষ সর্দার। গন্ডগোলের শেষে মাঠে থাকা সাংবাদিকদের অনিমেষবাবু জানান,”ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে গোল দিয়ে ম্যাচটা জিতলাম। এটা জর্জিয়ান মানতে পারেনি। ম্যাচ শেষ হতেই ওদের চার-পাঁচজন ফুটবলার আমাদের উপর হামলা করল। তাই দেখে ওদের সমর্থকরাও হামলা করে। খুব দূ:খজনক ঘটনা।” হামলার ঘটনা সরাসরি স্বীকার না করলেও তাদের ফুটবলারদের আরও ডিসিপ্লিন হতে হবে জানিয়েছেন জর্জিয়ান অ্যাকাডেমির কোচ তাশি পালজোর ভুটিয়া। তিনি বলেছেন,”স্পোর্টসে এই ধরনের টেম্পারামেন্ট দেখা যায়। তবে আমাদের ছেলেদের আরও ডিসিপ্লিনড হতে হবে। ম্যাচ শেষে আমি তো উইনিং টিমকে উইস করতে গেছিলাম। তখন কি হয়েছে কিছুই জানি না। পরে বুঝলাম একটা জটলার সৃষ্টি হয়, কিছু একটা হয়েছে। আবার বলছি, আমাদের আরও ডিসিপ্লিন হতে হবে।”
এদিকে,আলিপুরদয়ারে খোলা মাঠে উত্তরবঙ্গ কাপ করার প্রয়োজন ছিল না বলে জানালেন কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব সুব্রত দত্ত। তিনি “ইনসাইড স্পোর্টস”কে ফোনে জানালেন,”আমরা আইএফএকে বলেছিলাম, কোচবিহারের স্টেডিয়ামে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ করতে। আমরা চেয়েছিলাম। এই ব্যাপারে আমাদের ডিস্ট্রিক্ট ইয়ুথ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অফিসার বি বি লেপচা আইএফএ সহসভাপতি তনুময় বসুর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কিন্তু তনুময়বাবু দেখছি বলে আর আমাদের ম্যাচ দিলেন না। উত্তরবঙ্গ কাপের ফাইনালে যা হয়েছে তা সত্যিই লজ্জার।”
আইএফএ এই উত্তরবঙ্গ কাপকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছে তাই নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে গোটা উত্তরবঙ্গের ফুটবল মহলে। এই প্রথম উত্তরবঙ্গ কাপ শুরু হল। টুর্নামেন্ট পরিচালনা করার জন্য আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জি দায়িত্ব দিলেন জেলার প্রতিনিধি তনুময় বসুকে। রাজ্য ফুটবলের নিয়ামক সংস্থার সচিব হিসেবে উত্তরবঙ্গ কাপের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত – একবারের জন্য যাননি জয়দীপ মুখার্জি। শিলিগুড়ির এক কর্তা (নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক) বলছিলেন,”আইএফএ নাকি নর্থবেঙ্গলকে পাখির চোখ করেছেন। ফুটবলের উন্নতি করবেন। অথচ টুর্নামেন্ট চলাকালীন একবারও এলেন না।” সঠিক প্রশ্ন তুলেছেন ওই কর্তা। “ইনসাইড স্পোর্টস”-র কাছে খবর, রবিবার উত্তরবঙ্গ কাপে না গিয়ে কলকাতায় তাঁর বন্ধুর এক ফুটবল টুর্নামেন্টে অতিথি হয়ে মঞ্চে আলো করে বসেছিলেন আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জি। তার এমন আচরনেই বোঝা যায় উত্তরবঙ্গ কাপকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। তাহলে উত্তরবঙ্গ কাপ কী লোক দেখানো?