◆উত্তর দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার দফতর◆
◆সন্দীপ দে◆
১০ মার্চ- অনিয়মের কারণে উত্তর দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান কমিটিকে ভেঙ্গে দিলেন জেলা শাসক অরবিন্দ কুমার মিনা। এই কমিটি ভেঙ্গে ৭ জনের একটি অ্যাড হক কমিটি গঠন করে আজ,শুক্রবার বিকেলেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্ব বুঝে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা শাসক অরবিন্দ কুমার মিনা। প্রশাসনের তৈরি ৭ সদস্যর কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে হিমাদ্রি সরকারকে। এছাড়াও বাকি সদস্যরা হলেন, অরিজিৎ ঘোষ, জয়ীতা বিশ্বাস, কৌশিক দত্ত,বিশ্বজিৎ মন্ডল, অমিত কুমার জোয়ারদার এবং উত্তম সিনহা।
বেশ কিছুদিন ধরেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান কমিটিকে ভেঙ্গে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। অবশেষে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে পুরনো কমিটি ভেঙ্গে নতুন অ্যাড হক কমিটি গঠন করেন জেলা শাসক। এই কমিটির সাত সদস্যকে নিজের দফতরে ডেকে শুক্রবারই জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার নির্দেশ দেন জেলা শাসক। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এই অ্যাডহক কমিটি সমস্ত ক্লাবকে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করবে। তখন সেটাই হবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার স্থায়ী কমিটি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যে কোন জেলা শাসক, সংশ্লিষ্ট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। স্বাভাবিক ভাবেই এই উত্তর দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হলেন এই জেলার জেলা শাসক অরবীন্দ কুমার মিনা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন কর্তা ও ভ্রমরা ইউনাইটেডের সচিব সুহৃদ কুমার দাস গত ১৪ ডিসেম্বর সাংবাদিক সম্মেলন করে বেনিয়ম সামনে এনেছিলেন। বর্তমান কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জেলা শাসকের কাছে অভিযোগ পত্র জমাও দিয়েছিলেন। সুহৃদবাবুর মূলত তিনটি অভিযোগ ছিল। (১) ২০১৬ হওয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনটাই অবৈধ। (২) একটি সংস্থার দুটি রেজিস্ট্রেশন কি করে হয়? (৩) বেশ কিছু ক্লাবকে অন্যায়ভাবে অ্যাফিলিয়েশন বাতিল করা হল কেন? এই অভিযোগ জমা করার পাশাপাশি নথিপত্রও জমা করেছিলেন সুহৃদ কুমার দাস। সমস্ত নথি খতিয়ে দেখেন জেলা শাসক। পরে যে সমস্ত ক্লাবগুলিকে অ্যাফিলিয়েশন বাতিল করা হয়েছিল সেই সব ক্লাব কর্তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন অরবিন্দ কুমার মিনা। জানা যায়, বাতিল হওয়া সংশ্লিষ্ট ক্লাব কর্তারা নাকি যাবতীয় নথিও জমা দেন জেলা শাসকের কাছে। সব কিছু খতিয়ে দেখেই বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন অ্যাড হক কমিটি গড়েন।
এই নতুন কমিটি হওয়ায় উত্তর দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার পুরনো কমিটির কোনও অস্তিত্ব রইল না। স্বাভাবিক ভাবেই অপসারিত জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব সুদীপ বিশ্বাস। ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-র পক্ষ থেকে সুদীপ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,”গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমি সচিব নির্বাচিত হয়েছিলাম। কিন্তু গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে আমার অপসারণ হল না। নির্বাচনে জেতার পর যদি হারতাম তাহলে আমার কোনও গ্লানি থাকত না।”
উত্তর দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিক অভিযোগ করে যিনি আন্দোলন শুরু করেছিলেন সেই সুহৃদ কুমার দাস বলছিলেন,”আমরা বহুদিন থেকে ক্রীড়া সংস্থার বেনিয়ম সামনে এনে একটা সুষ্ঠু কমিটির দাবি জানিয়ে আসছিলাম। অবশেষে সেই বিচার পেলাম।” আপনি বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন। আপনার আগে কেউ এগিয়ে আসেনি। অথচ প্রশাসন যে কমিটি গঠন করল সেই কমিটিতেই আপনাকে রাখেনি। এমনটা আশা করেছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সুহৃদবাবু জানান,”আমি নিজে কিছু পাওয়ার জন্য করিনি। আমার লক্ষ্য ছিল, জেলা ক্রীড়া সংস্থায় সব কাজ নিয়ম মেনে হোক। সব কিছুই সুষ্ঠুভাবে চলুক। গতকাল জেলা শাসক যে রায় দিয়েছেন তা তো আমার নৈতিক জয় হয়েছে। এটাতেই আমি তৃপ্ত।”
নতুন অ্যাড হক কমিটির চেয়ারম্যান হিমাদ্রি সরকার হলেন জেলার প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং বর্তমানে কাউন্সিলর। তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করলে হিমাদ্রিবাবু বলেন,”জেলা শাসক আমাদের নিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। আমরা সমস্ত ক্লাব কর্তাদের নিয়ে আলোচনা করব। জেলার খেলার উন্নয়ন করতে হলে সব কিছুর উর্ধ্বে থেকে কাজ করতে হবে। সবার সাহায্য দরকার। সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। বলতে পারেন জেলার খেলার শুদ্ধিকরণই আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে। গতকাল আমাদের জানানো হয়েছে। আজ দায়িত্ব নিয়েই কাজ শুরু করব।”