◆নির্বাসিত সুদীপ বিশ্বাস (ফাইল ছবি)◆
◆সন্দীপ দে◆
অনিয়মের কারণে গত ৯ মার্চ উত্তর দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি ভেঙে সাতজনের অ্যাডহক কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন জেলা শাসক অরবিন্দ কুমার মিনা। পাশাপাশি সংস্থার সচিবের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও উল্লেখ ছিল জেলা শাসকের ১৪ পাতার রিপোর্টে। জেলা শাসকের সেই নির্দেশ মেনে ৩৪ দিন পর উত্তর দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদ্য অপসারিত সচিব সুদীপ বিশ্বাসকে ১০ বছর নির্বাসনে পাঠাল অ্যাডহক কমিটি। প্রসঙ্গত, এই নির্বাসনের ফলে সুদীপ বিশ্বাস জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদিত কোনও খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। এমনকি নির্বাসনের মেয়াদ চলাকালীন জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। কোনও ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবেও জেলা ক্রীড়া সংস্থায় আসতে পারবেন না।
এই ব্যাপারে অ্যাডহক কমিটির চেয়ারম্যান হিমাদ্রি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,”আমাদের অ্যাডহক কমিটিতে রাখার সময় জেলা শাসক মহাশয় সব কিছু খতিয়ে দেখে তাঁর রিপোর্টে অপসারিত সচিবের বিরুদ্ধে লিগাল অ্যাকশন নেওয়ার কথা উল্লেখ ছিল। আমরা অ্যাডহক কমিটির সকল সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেই সুদীপ বিশ্বাসকে ১০ বছর নির্বাসিত করা হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল,শুক্রবার নির্বাসনের চিঠি সুদীপের কাছে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। আমাদের এই অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ ৬ মাস। জেলা শাসকের নির্দেশ,এই ৬ মাসের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে, বৈধ ভাবে নির্বাচন করে নতুন কমিটি তৈরি করতে হবে। যারা নির্বাচন করে জিতবে তারাই নতুন কমিটির দায়িত্ব নিয়ে জেলার খেলার গুরু দায়িত্ব সামলাবেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য জেলার খেলার উন্নয়ন।”
নির্বাসিত হওয়ার পর অপসারিত সচিব সুদীপ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,”যে কোনও শাস্তি দিতে গেলে, আগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়। তারও আগে এক মাসের সময় দিয়ে শোকজ করতে হয়। আমাদের জেলা ক্রীড়া সংস্থার সংবিধানে উল্লেখ আছে। আমার ক্ষেত্রে কোনওটাই হয়নি। না শোকজ লেটার দিয়েছে,না আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৪ ডিসেম্বর রায়গঞ্জ শহরের প্রেস ক্লাবে বেশ কিছু ক্লাব কর্তারা সুদীপ বিশ্বাস সহ কমিটির বিরুদ্ধে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। সেই সব ক্লাব কর্তাদের মূল তিনটি অভিযোগ ছিল – ১) আটটি ক্লাবকে অন্যায় ভাবে অ্যাফিলিয়েশন বাতিল করেছিল। একটা ক্লাবের খেলোয়াড়দের খেলা কেড়ে নেওয়া মানে মারাত্মক অপরাধ। ২) ২০১৬ সালে হওয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনটাই নাকি অবৈধ ছিল। ৩) একটি সংস্থার দুটি রেজিস্ট্রেশন হয় কি করে? এমন সব চাঞ্চল্যকর অভিযোগ জেলা শাসক অরবিন্দ কুমার মিনাকে নথি সহ সব জমা দিয়েছিলেন অভিযোগকারী কর্তারা। পরবর্তীকালে যে সব ক্লাবগুলির অ্যাফিলিয়েশন বাতিল করা হয়েছিল সেই সব কর্তাদের ডেকে যাবতীয় অভিযোগ শুনেছিলেন জেলা শাসক। প্রসঙ্গত, যেকোনও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি পদে থাকেন জেলারই জেলা শাসক। সেই ক্ষেত্রে উত্তর দিনাজপুর জেলার ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হলেন অরবিন্দ কুমার মিনা। সব কিছু খতিয়ে দেখেই তিনি সুদীপদের কমিটি ভেঙে দিয়েই সাতজনের অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছেন জেলা শাসক।
তবে কমিটি ভেঙে দেওয়ার পদ্ধতিগত ভুল ধরেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন অপসারিত সুদীপ বিশ্বাস। এখন প্রশ্ন উঠছে, কমিটি ভেঙে দেওয়ার পদ্ধতিগত যদি ভুল থাকে তাহলে সুদীপ বিশ্বাস মামলা করার আগে অ্যাডহক কমিটিকৈ দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কেন? দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার আগে জেলা শাসকের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে তখনই কেন আদালতে গেলেন না সুদীপ? ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর এই প্রশ্নের উত্তরে সুদীপ বিশ্বাস বলেন,”যে রায়ের কথা বলছেন তাতে কিন্তু চার্জ হ্যান্ডওভারের কথা বলা নেই। বলা হয়েছে অ্যাডহক কমিটিকে চার্জ বুঝে নিতে। ৯ মার্চ সিদ্ধান্ত হয়। ১০ মার্চ সংস্থার দায়ভার বুঝে নিতে বলা হয়। কিন্তু আমি পৌঁছনোর আগেই আগেই ১০ মার্চ ওরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার অফিসে এসে দায়িত্ব নেয়।” কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে তখনই তো এর বিরোধিতা করে আদালতে যেতে পারতেন। সেটা না করে ১১ মার্চ সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। তার অনেক দিন পর মামলার পথে হাঁটলেন। জবাবে সুদীপ বিশ্বাস বলেন,”বিষয়টা আদালতে বিচারাধীন। তাই বেশি কিছু বলব না। ভবিষ্যতে কি হবে দেখা যাবে।”
সুদীপের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে অ্যাডহক কমিটির চেয়ারম্যান হিমাদ্রি সরকার বলেন,”দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার জন্য জেলা শাসক আমাদের একটা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। ১০ মার্চ বিকেলের মধ্যে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার নির্দেশ ছিল। আমরা সেই মতো বিকেলেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার দফতরে পৌঁছে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি অফিস ঘর খোলা। পুরনো কমিটির লোকও ছিল। সুদীপের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন রাত ৯ টা নাগাদ তিনি পৌঁছে যাবেন। কিন্তু সুদীপ আসেননি। আমরা ৯ টা পযর্ন্ত অপেক্ষা করেছিলাম। তারপর যিনি ছিলেন তার কাছে যায়। পরের দিন সুদীপ বাকি দায়িত্বভার দেন। আমরা কোনও বেআইনি কাজ করিনি। নির্দেশ মতোই কাজ করেছি।”
আপনি নির্বাসিত। তাহলে কি ওয়েস্টবেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ফেডারেশনের সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন? “না। আমার যা দায়িত্ব আছে সেই সময়সীমা সভাপতি থাকব। তারপর মেয়াদ শেষ হলে চলে যাব।” বলেন সুদীপ। আর যদি ওয়েষ্ট বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ফেডারেশন কমিটি নৈতিকতার দায় নিয়ে সরে যেতে বলে? সুদীপ তখন বলেন,”আইনে যা আছে তাই হবে।”