সন্দীপ দে
ময়দানের সবাই ধরেই নিয়েছে আগামী সপ্তাহেই ইস্টবেঙ্গল কর্তারা সই করে যাবতীয় বিতর্ক ইতি টানতে চলেছেন। ঠিক তখনই নতুন করে ইস্টবেঙ্গল-ইনভেস্টর সংঘাতের রেশ পড়ল আইএফএ-এর সভাতেও। এমন পরিস্থিতি তৈরি হল যে, সভায় এসেও বেড়িয়ে যেতে হল ইস্টবেঙ্গল কর্তা দীপঙ্কর চক্রবর্তীকে (বাবু)।
বৃহস্পতিবার আসন্ন কলকাতা লিগ নিয়ে প্রিমিয়ার এ ডিভিশনের ১৪ টি ক্লাব কর্তাদের নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছিলেন আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জি। সভার শুরুতেই তিন প্রধান সহ ১৪ টি দলের প্রতিনিধি উপস্থিত হয়েছিলেন। এটিকে মোহনবাগানের প্রতিনিধি হিসেবে দেবাশিস দত্ত, মহমেডান স্পোর্টিংয়ের কামরুদ্দিন এবং এসসি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে দীপঙ্কর চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন। সভা ঠিক শুরু হওয়ার আগে ইস্টবেঙ্গল প্রতিনিধি বাবু ওরফে দীপঙ্করের মোবাইলে ফোন আসে। ফোনে কথা বলার পর মূহুর্তের মধ্যে সভা শুরুর আগেই আইএফএ থেকে চলে যান দীপঙ্কর। সভা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে সচিব জয়দীপ মুখার্জিকে ফোন করেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের সিইও শিবাজি সমাদ্দার। তিনি ফোনেই আইএফএ সচিবের কাছে জানতে চান, আইএফএ কেন ওদের (ইস্টবেঙ্গল) মিটিংয়ে ডাকছে? ততক্ষণে শিবাজি সমাদ্দারের ফোন স্পিকার অন করে সভার সদস্যদের শোনাতে শুরু করেছেন জয়দীপ।
সংক্ষিপ্ত ফোনালাপে জয়দীপ এসসির সিইওকে বলেন, কল্যাণ মজুমদার ইস্টবেঙ্গলের সচিব। তাই তাঁরা কল্যাণবাবুকেই চিঠি দিয়েছেন। শিবাজি সমাদ্দার তখন বলে ওঠেন, এসসি ইস্টবেঙ্গলে কল্যাণ মজুমদারের অস্তিত্ব নেই। কেন তাঁকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে? জবাবে জয়দীপ বলেন, তাদের আভ্যন্তরিন সমস্যা তাঁরা যেন মিটিয়ে নেন।
এখন প্রশ্ন হল, ইস্টবেঙ্গলের প্রতিনিধি হিসেবে দীপঙ্কর আইএফএ-এর সভায় এসেও কেন চলে গেলেন? সভার শুরুর আগে দীপঙ্করের কাছে কার ফোন এসেছিল, যা সেই ফোনে কথা বলা মাত্রই দীপঙ্করকে সভা ছেড়ে সভা ছেড়ে চলে যেতে হল? কে সেই ব্যক্তি? এসসি ইস্টবেঙ্গলের সিইও শিবাজি সমাদ্দার সভার শুরুর পর জয়দীপকে ফোন করলেন মানে তিনি এদিনের সভার কথা আগে জানতেন না? দেরিতে হলেও সভার কথা কে তাকে জানাল?
যতদুর জানা যায়, নাম বদলে এসসি ইস্টবেঙ্গল হলেও রেজিস্ট্রেশনে আগের নাম – ইস্টবেঙ্গলই থেকে গিয়েছে। ফলে আইএফএ সচিব ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদারকেই সভার চিঠি পাঠিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগে এই মর্মে সচিব জয়দীপ চিঠি দিয়ে ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদারকে জানতে চেয়েছিলেন, তারা কাকে এবং কোন ঠিকানায় চিঠি দেবেন? জয়দীপের সেই চিঠির উত্তর আজও দেয়নি ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কর্তারা।
এদিনের এই বিতর্কিত ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে বিবৃতি দিয়েছেন চার কর্তা। কি বলেছেন তাঁরা?
সুব্রত দত্ত (চেয়ারম্যান, আইএফএ) ঃ ” ইস্টবেঙ্গলের প্রতিনিধি সভায় হাজির ছিল না। এটা হয়তো ইস্টবেঙ্গলের আভ্যন্তরিন সমস্যা। আমরা ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদারকে জানিয়েছিলাম।”
অজিত ব্যানার্জি (সভাপতি, আইএফএ) “এটা ক্লাবের ব্যাপার। সভায় কেন থাকতে পারেনি এই বিষয়ে তারাই বলতে পারবে। আইএফএ একটা সংস্থা। এখানে অনেকে আসে,যায়। এই নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা করার কিছু নেই। তবে হ্যাঁ, বাংলার ফুটবলে মোহনবাগান,ইস্টবেঙ্গলের অবদান আছে। ওরা না থাকলে মনে হয় একটা দিকে কিছু একটা নেই। তবে আইএফএ একটা সংস্থা। তার সম্মান বজায় রাখবে।”
দেবাশিস দত্ত (ডিরেক্টর, এটিকে মোহনবাগান).ঃ”ইস্টবেঙ্গলের প্রতিনিধি একবার ঢুকে বেড়িয়ে গিয়েছে। বাকি ১৩ দলের প্রতিনিধিরা সভায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থিত ছিল। লিগ করা নিয়ে ভাল আলোচনা হয়েছে।”
ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকারকে ফোন করেও তাঁর প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে আইএফএ সূত্রের খবর,এই ঘটনার কয়েক ঘন্টার পর ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে আইএফএকে জানিয়ে দিয়েছে এবার থেকে যাবতীয় চিঠি যেন শ্রীসিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষকেই জানায়। অর্থাৎ ফুটবল সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকান্ডে যুক্ত থাকবে শুধু এসসি ইস্টবেঙ্গল কর্তারাই।
এদিকে, এদিনের সভায় ঠিক হয়, সম্ভবত ১৮ আগস্ট কলকাতা লিগ শুরু হবে। শুধুমাত্র প্রিমিয়ার এ গ্রুপের ১৪ টা দল নিয়ে লিগ হবে। ৭ টি করে দল দুটি গ্রুপে ভাগ করে লিগ কাম নকআউট খেলা হবে। প্রথমে লিগ খেলে দুটি গ্রুপ থেকে তিনটি করে মোট ৬ টি দল উঠবে। তারাই নকআউট খেলবে।
এদিনের সভায় পিয়ারলেসের অশোক দাশগুপ্ত প্রস্তাব রাখেন বিদেশি ছাড়া লিগ হোক। তাঁর প্রস্তাব গ্রাহ্য না হলেও বিদেশির সংখ্যা কমানো হয়েছে। ক্লাব ৩ বিদেশি সই করাতে পারবে। খেলানো যাবে দুই বিদেশি। ইউনাইটেড স্পোর্টসের নবাব ভট্টাচার্য বলেন, লিগ শুরর পরে হঠাৎ তা বন্ধ হয়ে গেলে কি হবে? লিগ বন্ধ হলেও সই করা ফুটবলারদের তো চুক্তির টাকা দিতে হবে। তখন কি হবে? জবাবে সচিব জয়দীপ বলেন, এখনই এর উত্তর দেওয়া খুব কঠিন। সব কিছুই পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।
জর্জ টেলিগ্রাফের প্রতিনিধি অধিরাজ দত্ত প্রস্তাব দেন, লিগ নক আউট হলে নিচের দলগুলি যাতে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় সেটাও দেখা উচিত। পরে অধিরাজ প্রস্তাব দেন,দুটি গ্রুপ থেকে মোট ৬ টি দল উঠবে। কিন্তু নিচের ৮ টি দল(দুটি গ্রুপ ৪+৪) নিয়ে নকআউট খেলা হোক। এই দুটি গ্রুপের দুটি সেমিফাইনালে যে দুটি দল জিতবে তারাই প্রথম ৬টি দলের সঙ্গে নক আউট খেলুক। অধিরাজের এই প্রস্তাব সভার সদস্যরা মেনেও নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এবারের কলকাতা লিগে অবনমন থাকছে না। আর লিগের সব ম্যাচ হবে দর্শক শূন্য গ্যালারিতে/মাঠে। শুক্রবার, ২ জুলাই আইএফএ-এর লিগ সাব কমিটির সভা ডেকেছেন সচিব জয়দীপ মুখার্জি।