ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : ইস্টবেঙ্গলের “দুয়ারে” পৌঁছে গেল শ্রীসিমেন্টের সংশোধিত চুক্তিপত্র।
সোমবার সন্ধ্যায় ইস্টবেঙ্গলের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে মূল চুক্তিপত্র। সংশোধিত সমস্ত তথ্য যোগ করেই ক্লাবকে চূড়ান্ত চুক্তিপত্র সই করার জন্য পাঠানো হয়েছে। মূল চুক্তিপত্র পাওয়া মাত্রই নিজেদের আইনজীবীদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা।
গত তিন ধরেই শ্রীসিমেন্ট বলে আসছিল লিখিতভাবে আগে জানাক যে সই করবে তবেই সংশোধিত চুক্তিপত্র পাঠাবে। সূত্রের খবর, ইস্টবেঙ্গল কোনও লিখিত ভাবে জানায়নি। তবে মৌখিক ভাবে সই করার সম্মতি জানিয়েছেন কর্তারা। এমনটাই দাবি শ্রীসিমেন্টের এক কর্তার। তাহলে কি এবার সই হচ্ছেই? শ্রীসিমেন্টে সেই কর্তাটি “ইনসাইড স্পোর্টস”-কে বলছিলেন, “সই করার তো কথা। তবে ওদের বিশ্বাস নেই। নতুন নতুন দাবি করছে। দেখো আবার না কোনও দাবি করে বসে।” দেবব্রত সরকাররা ক্লাব তাঁবুর একটা অংশ ব্যবহার করতে চান আগের মতোই। সেই অধিকার দেওয়া হবে? উত্তরে শ্রীসিমেন্টের কর্তাটি বলেন,”ওদের বেশ কিছু শর্ত কিন্তু বদলে ফেলা হয়েছে। নতুন করে আর কিছু বদল হবে না।”
গতকাল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ফুটবল প্রেমী দিবস অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের কর্তা দেবব্রত সরকার। চোখে, মুখে ক্লান্তির ছাপ। কবে সই করবেন? “ইনসাইড স্পোর্টসে”র প্রশ্নের উত্তরে দেবব্রত সরকার জানান,”আশা করছি দুই থেকে চার দিনের মধ্যে একটা কিছু হবে। এর বেশি কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই আমি। তবে যা হওয়ার এই সপ্তাহেই হবে।”
আজ,মঙ্গলবার থেকে নিজেদের আইনজীবী চুক্তিপত্র পড়ে দেখবেন। তারপর ক্লাবকে আইনি মতামত জানাবেন। তারপর কর্মসমিতির বৈঠক ডেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দেবব্রত সরকাররা। এই প্রক্রিয়াটা শেষ হতে সময় লাগতে পারে একদিন। কারণ, ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের নতুন দাবি প্রায় সবই মেনে নিয়েছেন শ্রীসিমেন্ট। এমনকি লগ্নিকারীদের দাবি মেনে ক্লাবের সদস্যদের যাবতীয় তথ্যও তুলে দিতে রাজি হয়ে গিয়েছেন দেবব্রত সরকার। তাহলে এরপরও সমস্যাটা কোথায়?
সমস্যা হল, ক্লাব তাঁবুর পুরোটাই নিয়ে নিচ্ছে শ্রীসিমেন্ট। এটা নতুন শর্ত নয়। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা যখন নবান্নে প্রথম চুক্তিপত্রে সই করেন তখনও এই তাঁবু লগ্নিকারীদের অধিকারেই থাকবে সেই চুক্তিতে উল্লেখ ছিল। তখন সই করার সময় ইস্টবেঙ্গল কর্তারা কেন আপত্তি করেননি? গত সপ্তাহে ঠিক এই প্রশ্নটাই তুলেছেন বাইচুং ভুটিয়াও। শ্রীসিমেন্ট পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে, ক্লাব সভাপতি, সচিবের জন্য আলাদা ঘর তৈরি করে দেবে। সভাপতি প্রণব দাশগুপ্ত ও সচিব কল্যাণ মজুমদারের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
সমস্যাটা হল দেবব্রত সরকারের। তিনিই এত বছর ধরে ক্লাবটা চালিয়ে আসছেন। অথচ দেবব্রত সরকার কোনও পদে নেই। সামান্য কর্মসমিতির সদস্য। শ্রীসিমেন্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেবব্রত সরকার কোনও ঘর পাচ্ছেন না। সমস্যাটা এখানেই। শ্রীসিমেন্ট আরও যেটা বেশি করে চায়ছে তা হল কিছু সদস্য (যারা দেবব্রত সরকারের বৃত্তের মধ্যে আছে) সব সময়, কারণে অকারণে ক্লাব তাঁবুর সোফায় বসে সময় কাটান। এই সিস্টেম বন্ধ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন শ্রীসিমেন্ট কর্তারা।
তাহলে কি সই হবে না? ক্লাব ও লগ্নিকারী সূত্রের খবর, ক্লাব তাঁবুর একটা অংশ ব্যবহার করার অধিকার পাওয়ার শেষ লড়াই করবেন দেবব্রত সরকার। তাঁরও হাতে সময় নেই। কারণ, আগামী ৩১ অগাস্ট ফুটবল ট্রান্সফার উইন্ডো বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া ১৫ দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় “ছেড়ে খেলা”র বার্তা ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের দিয়ে দিয়েছেন। আর দেবব্রত সরকার গত ছয় মাস ধরে মুখ্যমন্ত্রীর ‘গুড বুকে’ নেই। যে কারণে দেবব্রত সরকারের সঙ্গে দেখাই করেননি মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি এক ঝাঁক প্রাক্তন ফুটবলারদেরও দেখা করেননি।
শুধু তাই নয়, গত শনিবার টুটু বসুর সদ্য প্রয়াত পত্নীর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজের বিভিন্ন মহলের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। সেখানেও দেবব্রত সরকারদের সই না করার বিষয় নিয়ে আলোচনা শোনা যায়। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের একাধিক নেতা। এক প্রভাবশালী নেতা (একটা সময় তাঁরও ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল) বলে ওঠেন,”নিতুর উপর দিদি খুব বিরক্ত। ওকে বুঝতে হবে এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। বিজয় মালিয়া আর আসবে না। ইনভেস্টরই শেষ কথা। এটা মেনে নিতেই হবে।”
পাশাপাশি নবান্ন সূত্রের খবর, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে পুরুলিয়া জেলায় বড় টাকার অঙ্কে একটি প্রকল্পর কাজ শুরু করতে চলেছেন হরিমোহন বাঙ্গুর। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে দেবব্রত সরকারদের সই করতেই হবে। এছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই।