‘ইনসাইড স্পোর্টস’-র খবরের জের, ফিফা রেফারি সমরকে বেসরকারি সংস্থার চাকরির প্রস্তাব

0

সন্দীপ দে

“চাকরি নেই, সবজি বিক্রি করছেন ফিফা রেফারি সমর পাল”- ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর শীর্ষক এই প্রতিবেদনে ব‍্যাপক সাড়া সব মহলেই। আইএফএ, সিআরএ থেকে জেলার ক্লাব, প্রাক্তন ফুটবলার সমরের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর মাধ‍্যমে কলকাতার এক বেসরকারি সংস্থা সমরকে চাকরির প্রস্তাবও দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, শুক্রবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদন পড়ার পর ইতিমধ‍্যে তিন ব‍্যক্তি বাগনানের মুককল‍্যাণপুরের ফিফা সহকারী রেফারি সমর পালের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যে তিনজন পাশে দাঁড়ালেন, তারা তাঁদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। কিন্তু তাঁদের সাহায‍্য করার সদিচ্ছা দেখে আমরা তাদের অনুরোধটা রাখতে পারলাম না। এই কঠিন সময়ে মানুষ, মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে এটাও প্রকাশ হওয়ার প্রয়োজন আছে।

এখনও পযর্ন্ত যে তিন ব‍্যক্তি সমর পালের পাশে দাঁড়ালেন এরা হলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার রূপক চৌধুরী (হরিনাভিতে থাকেন), বালুরঘাটের জয়দেব সরকার (কলকাতা পুলিশে কর্মরত) এবং মুর্শিদাবাদের লালবাগ শহরের শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব বান্ধব সমিতির অন‍্যতম কর্তা পার্থ বনিক।

একই সঙ্গে বেহালার পদ্মশ্রী সৈলেন মান্না ফুটবল অ‍্যাকাডেমির সচিব গৌতম দাসও এগিয়ে আসেন। ওই ক‍্যাম্পের সহসভাপতি চিত্তরঞ্জন দাস নিজের বেসরকারি সংস্থায় চাকরির প্রস্তাব দিয়েছেন। সমর চাইলেই আগামী ১ জুন থেকেই নতুন চাকরিতে যোগ দিতে পারেন। গৌতমবাবুই ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর সঙ্গে চিত্তরঞ্জন দাসের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন। সমর পাল সাহায‍্য ও চাকরির প্রস্তাব পেয়ে খুশি। প্রত‍্যেককে তিনি ধন‍্যবাদ জানাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই চিত্তরঞ্জন দাস প্রতিষ্ঠিত ব‍্যবসায়ী। চিত্তবাবু ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন, “আমিও একটা সময় রেফারি ছিলাম। রেফারিদের কষ্ট আমি জানি। সমর পালকে নিয়ে আপনাদের প্রতিবেদন পড়ে খুব খারাপ লেগেছে। একজন ফিফা রেফারির যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে অন‍্য রেফারিদের কি অবস্থা হতে পারে বুঝতে অসুবিধা হয় না। আমি আপনাদের মাধ‍্যমে সমর পালকে ওপেন অফার দিচ্ছি, ও চাইলেই আমার কোম্পানিতে জুন মাসের প্রথম দিন থেকেই জয়েন করতে পারে।”

সমর পালের মত অধিকাংশ রেফারির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। স্পোর্টস কোটায় যাতে চাকরি হয় তার জন‍্য কি রাজ‍্য সরকারের কাছে কোনও প্রস্তাব রাখবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে কলকাতা রেফারি সংস্থার সচিব সুকৃতি দত্ত জানালেন,”আমরা চিন্তা ভাবনা করছি। আর আইএফএ যদি উদ‍্যোগ নেয় তাহলে আমাদের একটু সুবিধা হয়। আমরাও এগোতে পারি। লকডাউন উঠে গেলে আমরা এই বিষয় নিয়ে কমিটি মেম্বারদের সঙ্গে আলোচনা করব।”

এই ব‍্যাপারে আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে জানান,”সিআরএ-এর কাজে আমরা কখনও হস্তক্ষেপ করি না। করাটা ঠিকও নয়। তবে যেখানে সাহায‍্য, পাশে থাকার প্রশ্ন উঠছে সেখানে আইএফএ সব সময় সিআরএ-এর পাশে থাকবে। সমর পালের খবরটা খুবই দূঃখজনক ঘটনা। তবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই বাংলায় কয়েক হাজার রেফারি আছেন। তাদের অবস্থা ভাল নয়। আমরা যৌথ ভাবে ক্রীড়ামন্ত্রীকে বলতে পারি। পাশাপাশি যদি একটা সিআরএতে ফান্ড তৈরি করা যায় সেটাও ভাবতে হবে।”
আপনারও তো কিছু সোর্স আছে, কয়েকজন রেফারির কি চাকরির ব‍্যবস্থা করা যায় না? জবাবে জয়দীপ বলেন,”কয়েক মাস আগে আমি কল সেন্টারে চার, পাঁচজন রেফারির চাকরির ব‍্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু ওই রেফারিরা সেই চাকরি নিতে চাননি।”

প্রসঙ্গত, রেফারিদের ফান্ড তৈরি করতে হলে তাদের স্পনসর দরকার। এই ব‍্যাপারে প্রথম সাহায‍্য করেছিলেন আইএফএ-র চেয়ারম‍্যান সুব্রত দত্ত। এক সরষের তেল কোম্পানিকে এনে দিয়েছিলেন সুব্রতবাবু। তারপরেই আসে জয়দীপের কোম্পানি। সিআরএ-এর প্রাক্তন সচিব উদয়ন হালদার বলছিলেন,”একটা সময় জয়দীপ মুখার্জির কোম্পানি সিআরএকে তিন বছরের জন‍্য স্পনসর করেছিল। দারুনভাবে সাহায‍্য করেছিল।”
প্রসঙ্গত, তিনবছর হতেই আইএফএ-এর কোনও এক কর্তার নির্দেশে জয়দীপের কোম্পানিকে চলে যেতে হয়েছিল। তারপরেই এসেছিল নতুন স্পনসনর। গত বছর থেকে সেটাও নেই। লিগ শুরু হলে সেই স্পনসর থাকবে কিনা এখনও নিশ্চিত নয় সিআরএ কর্তারা।

তবে উদয়নবাবু রেফারিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। “এই কঠিন পরিস্থিতিতে কি হবে জানি না। এই ভাবে চলতে থাকলে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা আর রেফারি হতে আসবে না। কনিকা বর্মনকে জেলা থেকে তুলে এনেছিলাম। আজ সে ফিফার ব‍্যাজ পেয়েছে। নতুন কাউকে আর আনা সম্ভব? আমি ব‍্যক্তিগতভাবে সিআরএ ও ক্রীড়ামন্ত্রীকে চিঠি পাঠাচ্ছি। বাংলার রেফারিদের জন‍্য কিছু একটা পদক্ষেপ করতেই হবে।” বলছিলেন প্রাক্তন ফিফা রেফারি উদয়ন হালদার।

প্রাক্তন ফিফা রেফারি প্রদীপ নাগ দূঃখ করে বলছিলেন,”আমরা আগেও পেশাদার ছিলাম না। এখনও নয়। ভবিষ্যতেও পেশাদার হতে পারব কিনা সন্দেহ আছে। সরকার চাকরি দিলে খুবই ভাল হবে। অন্তত নতুন প্রজন্মর ছেলে-মেয়েরা বলতে পারবে রেফারি হয়েও চাকরি পাওয়া যায়। কিন্তু সমস‍্যা অনেক গভীরে। তাই আমার মনে হয় নিজের চাকরি নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here