ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : ক্লাবের পরিকাঠামো এবং স্পোর্টস ও ইয়ুথ ফুটবলের উন্নয়নের জন্য ইস্টবেঙ্গল সদস্য-সমর্থকদের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন করলেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কর্তারা। বুধবার ক্লাবের কর্মসমিতির সভায় সর্বসম্মত ভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের প্যাডে ক্লাব সহসভাপতি শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্তর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে সদস্য-সমর্থকদের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বরও দেওয়া হয়েছে। এই আর্থিক সাহায্য আসলে কর্তারা ‘ক্রাউড ফান্ডিং’কেই বোঝাতে চেয়েছেন। যার যা সামর্থ্য তারা ক্লাবকে আর্থিক সাহায্য করতে পারেন। তার জন্য তাদেরকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ – এর চল বিদেশে বহু বছর আগে থেকেই আছে। কিন্তু ২০২১ সালে ভারতীয় ফুটবলে প্রথম এই ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ শুরু করেছিলেন ইউনাইটেড স্পোর্টসের কর্তা নবাব ভট্টাচার্য। ইউনাইটেড স্পোর্টসের খুদে ফুটবলারদের জন্য অত্যাধনিক ইকুইপমেন্ট কেনার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছিলেন নবাব। ‘মিল্যাপ’ বলে এক সংস্থার মাধ্যমে স্বচ্ছতার সঙ্গে চাঁদা নেওয়া হয়েছিল। পুরোটাই অন লাইন ট্রানজাকশন। যার নাম “ক্রাউড ফান্ডিং”। এখন বিদেশে ছোট,বড় অনেক সংস্থা, ক্লাব আছে, যারা ‘মিল্যাপ’-এর মতো একাধিক সংস্থার মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য নিয়ে চলছে।
শিক্ষা,মেডিক্যাল,স্পোর্টস নিয়ে বেশি কাজ করে সংস্থাগুলি। প্রসঙ্গত, ইউনাইটেড স্পোর্টসের অন্যতম কর্তা নবাব ভট্টাচার্যর হাত ধরে এই প্রথম ভারতীয় ফুটবলে “ক্রাউড ফান্ডিং” শুরু হয়। এবার সেই রাস্তায় হাঁটলেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ক্লাবের জন্য টাকা তুলতে নবাব ও ইস্টবেঙ্গল যে পন্থা অবলম্বন করলেন, আজ থেকে ২৬ বছর আগে এই কাজটাই করেছিলেন ইউনাইটেড স্পোর্টসের সচিব অলোকেশ কুন্ডু। সালটা ছিল ১৯৯৫। তখন ক্লাবের নাম ছিল এভাররেডি অ্যাসোসিয়েশন। ক্লাবের ফুটবল দল গড়তে টাকার দরকার। স্পনসর নেই। তাই বন্ধুদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার জন্য বিল বই ছাপিয়ে ছিলেন অলোকেশ কুন্ডু। সেই বিল বই থেকেই ফুটবল প্রেমীদের কাছে (পরিচিতদের কাছে) ক্লাবের দল গড়ার জন্য টাকা তুলেছিলেন অলোকেশ কুন্ডু। ২৬ বছর আগে তখন সোস্যাল মিডিয়া,বিভিন্ন অ্যাপ ছিল না। আজকের ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ সেই সময় বিল বই করে সময়ের অনেক আগেই ভেবে বাস্তবায়িত করেছিলেন অলোকেশবাবু। সেই দিক দিয়ে দেখতে গেলে বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলে এমন প্রচেষ্টা হয়তো অলোকেশ কুন্ডুই প্রথম পদক্ষেপ করেছিলেন।
বুধবার ক্লাবের সহ-সভাপতি শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত এক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছেন, অতিমারির পর থেকে ইস্টবেঙ্গলকে অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। তবুও পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করে তোলার চেষ্টা হয়েছে। অনেক দিন ধরেই তাঁরা সমাজমাধ্যম এবং বহু সমর্থকের থেকে প্রস্তাব পাচ্ছিলেন, কেন বিদেশি ক্লাবগুলির মতো ইস্টবেঙ্গলেও ‘ক্রাউডফান্ডিং’ করা হচ্ছে না। শিলিগুড়িতে রাস্তা উদ্বোধনের সময়েও এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল বলে দাবি ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের। সেই সব সদস্য-সমর্থকদের প্রস্তাবকে মান্যতা দিয়ে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ শুরু করল ইস্টবেঙ্গল।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা দেবব্রত সরকার জানান,”ফুটবল মানেই যে শুধু সিনিয়র দল তা কিন্তু নয়। আমাদের জলপাইগুড়িতে একটা অ্যাকাডেমি আছে। তারও পরিকাঠামো তৈরি করতে অর্থের প্রয়োজন। আমাদের ইয়ুথ ফুটবলের ডেভেলপমেন্টের জন্য এবং পরিকাঠামোর জন্য এই ক্রাউড ফান্ডিং-এর ব্যবস্থা করা হল। আমাদের ইনভেস্টর যদি মনে করে সিনিয়র দল গঠনে এই ক্রাউড ফান্ডিংয়ের অর্থ ব্যবহার করতে চান তাহলে করতে পারে। সবটাই নির্ভর করছে ফান্ডিংয়ের উপরে।”