ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : আর্থিক তছরুপের অভিযোগে ৬ বছরের জন্য সাসপেন্ড করল CRA (কলকাতা রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশন)। এই সংস্থার কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে রেফারি কাশীনাথ সেনকে ৬ বছরের জন্য সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মর্মে CRA-এর সকল সদস্যদের মেল করে কমিটির এই সিদ্ধান্ত জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পেরেন্ট বডি আইএফএকেও।
এক বছর আগের কমিটির ট্রেজারার ছিলেন এই কাশীনাথ সেন। পরে যখন নির্বাচন করে নতুন কমিটি হয় তখন আর্থিক অনিয়ম নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। CRA এর কমিটির সুপারিশে তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি তৈরি হয়। কর্ণেল গৌতম করের নেতৃত্বে সালাউদ্দিন পারভেজ ও সমরেশ ভট্টাচার্য আর্থিক তছরুপের অভিযোগে অভিযুক্ত কাশীনাথ সেনকে নিয়ে তদন্ত করেন। কাশীনাথকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তাঁদের রিপোর্ট জমা পরার পর CRA এর পক্ষ থেকে কাশীনাথকে আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য জানানোর জন্য তিন তিন বার চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু কাশীনাথ নিজের বক্তব্য জানাননি। তারপরও এক মাস সময় দিয়ে নিজের বক্তব্য পেস করার জন্য বলা হয়। তখনও তিনি কোনও উত্তর দেননি বলে দাবি করলেন CRA -এর বর্তমান সচিব উদয়ন হালদার। এই বিষয়ে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে উদয়ন হালদার বলেন,”চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কাশীনাথকে আমরা একাধিকবার চিঠি পাঠিয়ে তার বক্তব্য জানাতে বলেছিলাম। ও কিছুই জানাইনি। পরে আমাদের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল কমিটি ৬ বছরের জন্য সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয়।”
CRA সচিব উদয়ন হালদারের কাছ থেকে জানা গেল, কাশীনাথ সেনের বিরুদ্ধে ১২টি অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, CRA তাঁবুর মাঠে নিয়মিত আসা, ভারতের এক প্রাক্তন মহিলা ফুটবলারের সই জাল করে CRA এর ফান্ড থেকে ধার হিসেবে ১৫ হাজার টাকা তুলেছেন। শুধু তাই নয়, এক লক্ষ আশি হাজার টাকা দিয়ে CRA তাঁবুতে যে সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে তা কমিটির অনুমতি না নিয়েই করেছেন কাশীনাথ। উদয়নবাবুর সাফ কথা,”এটা আমার একার সিদ্ধান্ত নয়। বহু সদস্য ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিল। একটা সুষ্ঠু প্রসেসের মধ্যে দিয়ে তদন্ত করার পর কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের এই অ্যাসোসিয়েশের স্বচ্ছতা আনতেই এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কলকাতা রেফারি সংস্থায় কাশীনাথের সাসপেন্ড হওয়ার ঘটনা প্রথম নয়। অতীতে এই আর্থিক তছরুপের অভিযোগে কমল সরকারকে ৩ বছর সাসপেন্ড করেছিল কলকাতা রেফারি সংস্থা বলে জানা গিয়েছে।
এই মুহূর্তে কাশীনাথ সেন ডায়মন্ডহারবার এফসির সঙ্গে যুক্ত। তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে কাশীনাথ সেন ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলেন,”অন্যায় ভাবে আমাকে শাস্তি দিয়েছে। আমার দাবি ছিল, আমি যে সময়ে কমিটিতে ছিলাম সেই কমিটির সচিব, সভাপতি সহ পুরো কমিটির উপস্থিতিতে আমার বক্তব্য পেশ করব। কিন্তু সেটা হয়নি। জেনারেল মিটিংয়েও আমাকে বলার সুযোগ দেয়নি।” কিন্তু আত্মপক্ষের সমর্থনে বলার সুযোগ দিয়ে আপনাকে তো বর্তমান কমিটি তিন তিনবার চিঠি দিয়েছে। পরে আবার একমাস সময় দিয়েছিল। কিন্তু আপনি নাকি কোনও উত্তর দেননি? জবাবে কাশীনাথ বলেন,”আমাকে জানানো হয়নি। আমি এবার আইনি পদক্ষেপ করব।” আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, কোনও এক প্রাক্তন ভারতীয় মহিলা ফুটবলারের সই জাল করে টাকা তুলেছেন। সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়েছেন কমিটির অনুমতি না নিয়েই। উত্তরে কাশীনাথ বলেন,”সই জাল করে টাকা তোলার ঘটনা সত্যি নয়। আর পাম্প বসানোর ক্ষেত্রে সচিবের সই ছাড়া টাকা তোলা সম্ভব?”
এই ব্যাপারে CRA-এর বর্তমান সচিব উদয়ন হালদার বলেন,”তদন্ত প্রক্রিয়ার যাবতীয় নথি আমাদের কাছে আছে। তাকে যে আমরা চারবার আত্মপক্ষ সমর্থনে বলার সুযোগ দিয়ে চিঠি,মেল করেছি তার প্রমাণও আমাদের কাছে আছে। আর ও যে কমিটির সামনে বক্তব্য রাখতে ছেয়েছিল তা বর্তমান কমিটি প্রয়োজন মনে করেনি। কমিটির সর্বসম্মতিক্রমেই তদন্ত হয়েছে।”