◆সন্দীপ দে◆
আইএফএ পক্ষপাতদোষে দুষ্ট। একটা ক্লাবকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য শিলিগুড়ির বান্ধব সংঘ ক্লাবের বিরুদ্বে চক্রান্ত করা হয়েছে। তাই তারা আদালতের পথে। এমনটাই জানিয়েছেন বান্ধব সংঘর কর্তারা। সাংবাদিক সম্মেলন করে বান্ধব সংঘর কর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন,শনিবার,রবিবার আদালত বন্ধ। সোমবার তাঁরা মামলা করছেন। রবিবার আলিপুরদুয়ারে উত্তরবঙ্গ কাপের ফাইনাল ম্যাচ। তার আগে গোটা উত্তরবঙ্গের ফুটবল মহলে আইএফএকে নিয়ে চাপা উত্তেজনা।
উত্তরবঙ্গ কাপ নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত স্থানীয় ফুটবলারদের সঙ্গে ভিন রাজ্যের ফুটবলারদের খেলানো নিয়ে। গত শনিবার উত্তরবঙ্গ কাপে মুখোমুখি হয়েছিল শিলিগুড়ির বান্ধব সংঘ ও জলপাইগুড়ির ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন। ওই ম্যাচের জয়ী হয় বান্ধব। কিন্তু ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন অভিযোগ করে যে, বান্ধবের চার ফুটবলার বহিরাগত। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার আইএফএ-র শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি অভিযুক্ত বান্ধব সংঘকে কোনও রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাদের তিন পয়েন্ট কেটে নেয়। আইএফএ-র শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক হওয়ার পর কমিটির জনৈক কর্তা (পৃত্থীজিৎ ঘোষ) বিবৃতি দিয়েছিলেন,বান্ধবের তিন পয়েন্ট কাটার পাশাপাশি শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদকেও শোকজ করা হল। আইএফএ-র এমন সিদ্ধান্তে বেজায় চটেছেন শিলিগুড়ির ফুটবল মহল।
বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির জার্নালিস্ট ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন বান্ধব সমিতির কর্তারা। তাঁরা ওই সাংবাদিক সম্মেলনে আইএফএ-র এই অন্যায়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। ওই সাংবাদিক সম্মেলনে বান্ধব সংঘর সচিব চিন্ময় সাহা বলেন,”আইএফএ পক্ষপাতদোষে দুষ্ট। গত ২২ ফেব্রুয়ারি উত্তরবঙ্গ কাপ নিয়ে মিটিং হয়। ওই মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছিল, উত্তরবঙ্গের ক্লাবগুলো নিজেদের স্থানীয় লিগের জন্য যে সব ফুটবলারদের রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল তারা উত্তরবঙ্গ কাপ খেলতে পারবে। ওই মিটিংয়ে তনুময় বসুও ছিলেন। নিয়ম তো আইএফএই মানছে না। একটা দলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে চক্রান্ত করা হল। আমরাও সহজে ছাড়বো না। আমরা সবাই ঠিক করেছি আদালতে যাব।”
এই কর্তাদের জবাবে আইএফএ সহ সভাপতি তনুময় বসু “ইনসাইড স্পোর্টস”-কে বলেন,”জেলা লিগের জন্য রেজিস্টার্ড ফুটবলার নিয়ে উত্তরবঙ্গ কাপ খেলতেই পারে, এটা আলোচনা হয়েছিল মাত্র। কিন্তু মিটিংয়ের শেষে মিনিটসে লেখা হয়নি। জাস্ট আলোচনা হয়েছিল মাত্র। তাই আইএফএ সরকারি ভাবে কোনও চিঠি কোনও ক্লাবকেই পাঠায়নি। আইএফএ কোনও ভুল করেনি।”
শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব কুন্তল গোস্বামী ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে জানান,”আমরা শোকজের চিঠি এখনও হাতে পাইনি। চিঠি পেলে উত্তর দেব। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,উত্তরবঙ্গ কাপ নিয়ে আইএফএ-র ভূমিকায় স্বচ্ছতার অভাব স্পষ্ট। তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতাও সামনে এসে পড়েছে। যা শিলিগুড়ি ফুটবল মহলে হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই টুর্নামেন্ট ঘিরে আইএফএ-র ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে।
যেমন — ১) উত্তরবঙ্গের আটটা জেলার চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স দল নিয়ে এই টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেটা মানা হয়নি। টুর্নামেন্ট শুরুর পর জলপাইগুড়ির লিগ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স দলের পরিবর্তে তিন ও চার নম্বর দল অংশ নেয়। এই বিষয়ে অন্য দল গুলিকে আইএফএ জানায়ওনি।
২)মুর্শিদাবাদ পুলিশ দল উত্তরবঙ্গের মধ্যে পড়ে না (ফরাক্কা ব্রিজের আগে পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ। যা কোনওভাবেই উত্তরবঙ্গর মধ্যে পড়ে না)। তাহলে কেন মুর্শিদাবাদের পুলিশ দলকে নেওয়া হল?
৩) লিগের সকল রেজিস্টার্ড ফুটবলার উত্তরবঙ্গ কাপে খেলতে পারে বলে মৌখিক সম্মতি আইএফএ দেওয়ার পর কেন বহিরাগত বলে অভিযুক্ত ক্লাবকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি ম্যাচ পয়েন্ট কাটা হল?
৪) শিলিগুড়ির মহানন্দা ক্লাবকে ঘিরে আইএফএ-স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। উল্লেখ্য, শিলিগুড়িতে আইএফএ নিজেদের শাখা অফিস খোলার সিদ্ধান্ত গত মাসেই জানিয়েছিল। সবাইকে অবাক করেছে আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জির এক সিদ্ধান্তকে নিয়ে। রাজ্যের ফুটবল নিয়ামক সংস্থা আইএফএ-র শাখা অফিস খুলতে চলেছে শিলিগুড়ির বিখ্যাত ক্লাব মহানন্দার ক্লাব ঘরে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে আলোচনা না করে হঠাৎই একটা ক্লাবে আইএফএ অফিস করছেন জয়দীপ। তাঁর এমন বালখিল্য সিদ্ধান্ত দেখে কলকাতার গড়ের মাঠের গাধা গুলোও হাসছে। বান্ধব সংঘর এক কর্তা বলছিলেন,” আমাদের কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে অনেক ঘর আছে। সেখানে আইএফএ অফিস করলে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারতেন জয়দীপ। তার ভাবনা, কাজের ধরন দেখে ভাল লাগছে না। প্রশ্ন উঠবেই। অনেক কথায় কানে আসছে। কিন্তু সব কথা বলা যায় না। আফটার অল আইএফএ তো।
উল্লেখিত এই চারটি প্রশ্নর উত্তর দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ কাপ পরিচালনার মূল দায়িত্বে থাকা আইএফএ-র সহ সভাপতি তনুময় বসু। আলিপুরদুয়ার থেকে ফোনে তনুময়বাবু “ইনসাইড স্পোর্টস”-কে জানালেন,”প্রথমত,জলপাইগুড়ি জেলার চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স দল হঠাৎ নাম তুলে নেয়। আমরা ডিএসএর ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম। ওরা বলল দল গড়তে পারেনি। দ্বিতীয়ত,আমরা ওয়েস্ট বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ফেডারেশনের কোনও প্রোগ্রাম করলে নর্থবেঙ্গলের সঙ্গে মুর্শিদাবাদকেও ধরি। সেই হিসেবে মুর্শিদাবাদ পুলিশ দলকে নেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, রেজিস্টার্ড প্লেয়ারের খেলা নিয়ে তোমাকেই আগেই উত্তর দিয়েছি। আর তোমার চতুর্থ প্রশ্নর উত্তরে বলি, মহানন্দা ক্লাবে আইএফএ অফিসের উদ্বোধন কিন্তু এখনও হয়নি। দেখো কি হয়। এখানেই আইএফএ-র শাখা অফিস হবে ধরে নিলে কি করে?”
যে ক্লাবে আইএফএ -এর শাখা অফিস হতে যাচ্ছে সেই মহানন্দা ক্লাবের সচিব অরূপ মজুমদার আমাদের জানালেন,”এত বিতর্ক হওয়ার কি আছে? শিলিগুড়ির কেউ তো এগিয়ে আসেনি। আমরাই আইএফএ-র পাশে দাঁড়িয়েছি।”
কিন্তু রাজ্য ফুটবল নিয়ামক সংস্থার শাখা অফিস একটা ক্লাবে হতে পারে? স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। উত্তরে অরূপবাবু জানান,”আমরা লিগ খেলবো শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের অধীনে। সমস্যা কোথায়? যারা এই বিষয় নিয়ে বলছে তাদের প্রশ্ন করুন,খেলা নিয়ে এতই যদি ভাবেন তাহলে শিলিগুড়ি থেকে সাইয়ের চলে যাওয়া আটকাতে পারল না কেন?”
মহানন্দা ক্লাবে আইএফএ অফিস করা নিয়ে “গিভ অ্যান্ড টেক পলিসি”-র নমুনা তুলে ধরলেন বান্ধব সংঘর কর্তা সৌমেন দে। “ইনসাইড স্পোর্টস”-কে সৌমেনবাবু বললেন,”তরাই মাঠে আমাদের প্রথম ম্যাচ ছিল মহানন্দার বিরুদ্ধে। ম্যাচটা ছিল দুপুর একটার সময়। বান্ধবের দল নির্দিষ্ট সময়ে মাঠে পৌঁছে গিয়েছিল। আর মহানন্দা মাঠে আসে আড়াইটার সময়। ঠিক তখনই একই গাড়িতে পৌঁছলেন আইএফএ-র সহসভাপতি তনুময় বসু ও মহানন্দা ক্লাবের সচিব অরূপ মজুমদার। আমাদের তো ওয়াকওভার পাওয়ার কথা। কিন্তু পাইনি। এবার বুঝে নিন।”
এই ব্যাপারে অরূপবাবুর উত্তর,”খোঁজ নিয়ে দেখুন, সেদিন শিলিগুড়ি শহরে বিজেপির বিরাট মিছিল ছিল। সব রাস্তায় জ্যাম। তাই মাঠে আসতে দেরি হয়েছে।”
শিলিগুড়ির একাধিক ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি আর এখনও বলছি। অরূপবাবু যতোই বলুন না কেন, যে ক্লাবে আইএফএ-র অফিস হবে সেই ক্লাব তো অতিরিক্ত সুবিধা পাবেই- এটাই ধরে নিয়েছেন শিলিগুড়ির ফুটবল মহল। মহানন্দায় আইএফএ অফিস এটাই মানতে পারছে না শিলিগুড়ির অধিকাংশ ক্লাব।