ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,৩০ মে : আয়লা,বুলবুল,আমফান, ইয়াস – এক একটা ভয়ঙ্কর ঝড় আসে,আর ভিটে ছাড়া হয়ে পড়েন ওঁরা। সুন্দরবনের গোসাবা, বাসন্তী, কুলতুলি, রায়দীঘি, নামখানা, সাগর সহ উপকূলের সর্বত্র এক ছবি। নদীর বাঁধ ভেঙে একের পর এক গ্রামে জল ঢুকে প্লাবিত। বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ভেরিতে নোনা জল ঢুকে পড়ায় মাছের চাষে ব্যাপক ক্ষতি। দু বেলা কি খাবেন, কোথায় খাবার পাবেন, খাবার পেলেও কতটা পাবেন জানেন না ওঁরা। অনিশ্চিত জীবন।
এই এলাকার ছেলে-মেয়েরা, ফুটবলকে হাতিয়ার করে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য ৩৬৫ দিন লড়াই করে, কিছু ম্যাচ খেলে সংসার খরচ জোগার করে। আজ, রবিবাসরীয় দুপুরে আইএফএ-এর সাহায্য হাতে নিয়ে সচিব সহ প্রতিনিধিদের সামনে ওঁদের করুন জিজ্ঞাসা-“এবার ফুটবল লিগ হবে তো? জেলার ফুটবল হবে তো?” এ এক উত্তর না জানা প্রশ্নের সামনে পড়ে এক অদ্ভুৎ নীরবতা আইএফএ প্রতিনিধিদের। কারণ করোনার কারণে এখনও কেউ জানে না, কবে ফুটবল শুরু হবে।
আজ, সকালে গোসাবায় পৌঁছে গিয়েছিল আইএফএ টিম। সঙ্গে ছিলেন সচিব জয়দীপও। কদিন আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, আইএফএ অনুমোদিত সুন্দরবন নার্সারি ফুটবল কোচিং সেন্টারের ফুটবল শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা হবে। সেই মতোই ক্যাম্পের ৬৩ জন ফুটবল শিক্ষার্থীর হাতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ তুলে দিল আইএফএ।
গোসাবা ব্লকে ১৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে আছে ৯ টি দ্বীপ। ৩৭২ কিলোমিটার জুড়ে আছে মস্ত বড় নদী বাঁধ। এই বাঁধের ৯ টি জায়গা ভেঙে পড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। ফলে বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই গোসাবায় ফুটবল চর্চাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লক ডাউনেও বিকেলে ক্যাম্পের ছেলেরা ফুটবল খেলতো। কিন্তু এখন সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিপ্রদাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লাইন দিয়ে আইএফএ-র সাহায্য নিতে এসে ফুটবলাররা বারবার জিজ্ঞাসা করছিল-“কবে শুরু হবে ফুটবল?”
“গোসাবায় না এলে এখানকার দুরাবস্থার ঘটনা অনুভব করতে পারতাম না। আইএফএ-এর পক্ষ থেকে আমরা যেটুকু পাশে থাকতে পেরেছি তাতেই ওরা খুব খুশি। বাড়ি-ঘর ভেঙে গিয়েছে। এত কষ্ট,তবু ছেলেরা ফুটবল কবে হবে জিজ্ঞাসা করছে। ভাবা যায় না। মনটা যেমন ভাল হয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু চিন্তায় থাকলাম, কবে ফুটবল শুরু করতে পারব? আমরাও ফুটবল শুরু করতেই চাই। কিন্তু করোনা কতটা কমছে, রাজ্য সরকার কি সিদ্ধান্ত নেবে-সবই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।” কথাগুলি বলছিলেন আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জি।
পরবর্তীকালে আইএফএ-এর পক্ষ থেকে আর কি কি পরিকল্পনা আছে? জবাবে জয়দীপ বলেন,”ইচ্ছে তো অনেক কিছুই আছে। তবে সকল স্তরের মানুষদের কাছে অনুরোধ করব, নিজের সাধ্যমত, নিজের এলাকা হোক, বাইরের এলাকা হোক বিপদে থাকা পরিবারের পাশে দাঁড়ান। আমরা কলকাতায় থেকে টিভি, খবরের কাগজে বিপর্যয়ের খবর, ছবি, ভিডিও দেখেছি। কিন্তু এদিন গোসাবায় এসে এমন কিছু দৃশ্য দেখলাম যা মন খারাপ করে দেয়। ফুটবলারদের পাশে থাকতে পেরে ভাল লাগছে।”