আইএফএতে নিজের ফেরার রাস্তা তৈরি করলেন জয়দীপ

0

◆সন্দীপ দে◆

নিজের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে আইএফএতে নিজের ফেরার রাস্তা তৈরি করলেন জয়দীপ মুখার্জি! প্রেসিডেন্ট নয়, চেয়ারম‍্যানও নয়, সচিব পদ থেকে পদত‍্যাগ করা জয়দীপ নিজেই গভর্নিং বডির বৈঠক ডাকলেন। আগামী ১৯ এপ্রিল, সোমবার, বিকেল ৩ টের সময় আইএফএ অফিসেই হবে গভর্নিং বডির সভা। এই বৈঠকের চিঠি মেল করে শুক্রবারই বেশ কিছু ক্লাবকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। আইএফএ সচিব ও তিন সহসভাপতির পদ‍ত‍্যাগ পত্র ইস‍্যু নিয়েই গভর্নিং বডির বৈঠকের একমাত্র অ‍্যাজেন্ডা উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে সই করেছেন খোদ জয়দীপ মুখার্জি। নিজেকে সচিব পদে ফেরাতে নিজেই সভা ডাকলেন জয়দীপ। গভর্নিং বডির সভা মানেই তাঁকে সচিব পদে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় নিশ্চিত। ময়দানের ‘সেটিং’-এর খেলায়, সুব্রত দত্ত ও অজিত ব‍্যানার্জি চিঠি দিয়ে নাকি জয়দীপকে থেকে যাওয়ার জন‍্য অনুরোধ করেছেন।সেই চিঠিও নাকি জয়দীপ পেয়েছেন। কিন্তু এখনও (এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ) নিজের পদত‍্যাগ পত্র ফিরিয়ে নেননি। তাহলে কি করে তিনি গভর্নিং বডির সভা ডাকলেন? ময়দানে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

আর জয়দীপের সই করা চিঠি নিয়েই সন্ধ‍্যা থেকে ময়দানে বিভিন্ন ক্লাব কর্তাদের মধ‍্যে বিস্ময় তৈরি হয়েছে। উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন।

প্রশ্ন (১) – সচিব পদে পদত‍্যাগ করার সময় জয়দীপ বলেছিলেন, আই লিগ শেষ হলেই তিনি আর আইএফএ অফিসে যাবেন না। আইলিগ শেষ হওয়ার পর আইএফএ অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। সভাপতি তাঁকে আসার জন‍্য কোনও অনুরোধ করেননি। এই বিষয়টা নিয়ে গভর্নিং বডির বৈঠকও ডাকছিলেন না সভাপতি অজিত ব‍্যানার্জি। তাছাড়া সেই ভাবে কোনও ক্লাব (চাঁদনি ছাড়া) জয়দীপকে ফেরানোর জন‍্য চিঠি দেয়নি। বাধ‍্য হয়ে কি তিনি নিজেই গভর্নিং বডি ডাকলেন জয়দীপ? তিনি যখন সচিব পদে ইস্তফাই দিয়েছেন তাহলে নিজে সই করে কেন গভর্নিং বডির সভা ডাকলেন? তিনি তো সচিব আছেন বা থাকতে চান এটাই তো প্রতিষ্ঠা পেল তাঁর সই করা চিঠিতেই।

প্রশ্ন (২) – জয়দীপের পদত‍্যাগ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, এটাই আসন্ন গভর্নিং বডির সভার আলোচ‍্য বিষয় বস্তু। যার সচিব পদে থাকা, না থাকা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে সেই কিনা বৈঠক ডাকছে? পাড়ার কোনও গলির ক্লাবেও এমন ঘটনা ঘটেছে?

নিজের সচিব পদ পাওয়ার জন‍্য এমন লজ্জাজনক ভাবে নিজেই চিঠি দিয়ে গভর্নিং বডি ডেকে বসলেন জয়দীপ। নি:সন্দেহে আইএফএ-এর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা তো বটেই এমনকি গড়ের মাঠে সেরা হাস‍্যকার ঘটনাও।

প্রশ্ন (৩)- এই জটিল পরিস্থিতিতে গভর্নিংবডি কে ডাকতে পারেন? সভাপতি? চেয়ারম‍্যান? নাকি সচিব? আইএফএ-র চেয়ারম্যান সুব্রত দত্তর সম্প্রতি তিনটি বক্তব‍্য ময়দানে বিভ্রান্ত ছড়িয়েছে?
১) গত ৫ মার্চ সুবর্ন বনিক সভায় আইএফএ-র স্পেশাল অ‍্যানুয়াল জেনারেল মিটিংয়ে জয়দীপের সমর্থনে নজরুল নামে এক জনৈক কর্তার প্রস্তাবে সুব্রত দত্ত বলেছিলেন, জয়দীপের বিষয়টা এই স্পেশাল এজিএমের অ‍্যাজেন্ডা নয়। সভাপতিকে প্রস্তাব দিতে হবে। সভাপতি গভর্নিং বডিতে ডেকে এই প্রস্তাব প্লেস করতে পারেন।
২) ১৩ এপ্রিল সন্ধ‍্যায় জর্জ টেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাবে ‘দলের বৈঠকে ‘ সুব্রতবাবু বলেছিলেন, তিনি বিষয়টা এবার নিচ্ছেন। অজিত ব‍্যানার্জির সঙ্গে কথা বলবেন। পয়লা বৈশাখের মধ‍্যে সমস‍্যার সমাধান হবে। ১৪ জন গভর্নিং বডির সদস‍্য প্রস্তাব দিলে চেয়ারম‍্যান গভর্নিং বডি ডাকতে পারেন।
৩) ১৫ এপ্রিল অর্থাৎ পয়লা বৈশাখের দিন এক বাংলা দৈনিকে সুব্রত দত্ত বিবৃতি দিয়েছিলেন,”আইএফএ-র সংবিধান অনুযায়ী চেয়ারম‍্যানের গভর্নিং বডির সভা ডাকার কোনও ক্ষমতা নেই। সচিব পদত‍্যাগ করলে সেই চিঠি অনুমোদন করার ক্ষমতা চেয়ারম‍্যান বা সভাপতি কারও নেই। গভর্নিং বডির সভা ডাকার ক্ষমতা আছে সচিবের। সংবিবিধান মতে সচিব পদত‍্যাগ করলে, এক মাসের মধ‍্যে নতুন সচিব নিয়োগ করতে হবে। যতদিন না নতুন সচিব আসছেন ততদিন পুরনো সচিব কাজ চালাবেন। সচিব উৎপল গাঙ্গুলি কিন্তু তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গভর্নিং বডির সভা ডেকেছিলেন।”

প্রশ্ন হল, আইএফএ-র সংবিধানে আসলে কি লেখা আছে? গড়ের মাঠের কর্তারা কি আদৌ জানেন? আমরা একাধিক কর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। কর্তারাও জানেন না। আর উৎপল গাঙ্গুলির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। জয়দীপ কিন্তু পদত‍্যাগ করেছেন? পদত‍্যাগী সচিব মিটিং ডাকতে পারেন? সেই মিটিং যদি তাঁকে নিয়েই হয় সেক্ষেত্রেও গভর্নিং বডির সভা ডাকার অধিকার আছে? তাহলে সংবিধানের কোন ফাঁক দিয়ে সচিব পদে পুনরায় ফিরে আসছেন জয়দীপ। গভীর রাতে এই প্রতিবেদনটি লেখার ফলে সুব্রত দত্তর নতুন করে কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে আমরা খুব শীঘ্রই সুব্রতবাবুর প্রতিক্রিয়া ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর পাঠকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

আসলে জয়দীপ এমন ভাবে পদ‍ত‍্যাগ করে বেকায়দায় পড়ে যাবেন তা তিনি ভাবতে পারেননি। জেলা সূত্রের খবর, ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ফেডারেশেনর এক এক কর্তা, গত দুদিন ধরে বিভিন্ন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তাদের অনুরোধ করেছেন,তাঁরা যেন জয়দীপের সমর্থনে চিঠি দেয়। শুক্রবার রাত এগারোটা পযর্ন্ত জয়দীপ সমর্থনে পাঁচটি জেলা চিঠি পাঠিয়েছে। বাকি জেলা ক্রীড়া সংস্থা গুলি ভাবার সময় চেয়েছে। বলে খবর।

আমরা আগেই জানিয়েছিলাম, জয়দীপের ফিরে আসার জন‍্য ময়দানের দুই কর্তা খুব চেষ্টা করছেন। সেই চেষ্টার ফল পাওয়া গিয়েছে পয়লা বৈশাখের দিনেই। কলকাতার এক প্রধান ক্লাবের প্রভাবশালী কর্তার মধ‍্যস্থতায় অজিত ব‍্যানার্জি ও সুব্রত দত্ত ও জয়দীপকে আলোচনায় বসিয়ে সমস‍্যার সমাধান করিয়েছেন। বড় ধরনের ঘটনা না ঘটলে, আগামী সোমবার এর গভর্নিং বডির সভায় আইএফএতে “খোকাবাবুর প্রত‍্যাবর্তন” ঘটবে।

কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাবে। যে পদ্ধতিতে, সংবিধানের বিভ্রান্ত ছড়িয়ে যে ভাবে জয়দীপ ফিরে আসছেন তা নিয়ে কোনও কর্তা ময়দানে প্রশ্ন তুলতে পারবেন? সময় বলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here