সন্দীপ দে◆রায়গঞ্জ (উত্তর দিনাজপুর)
২৯ মার্চ : গত ডিসেম্বরে রায়গঞ্জের টাউন ক্লাবের কুলদাকান্তু টুর্নামেন্টে এসে এখানকার ফুটবল উন্মাদনা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার ও “অর্জুন” পুরস্কার প্রাপ্ত দীপক মন্ডল। ফুটবল কোচিং ক্যাম্পে ফুটবল প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে তখনই টাউনের সঙ্গে কথা হয়েগিয়েছিল দীপকের। অবশেষে আজ,মঙ্গলবার রায়গঞ্জের বিখ্যাত টাউন ক্লাবের মাঠে “ওরিয়েন্ট রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউট ফুটবল কোচিং ক্যাম্প”-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে গেল।
পাঁচ জন সাপোর্ট স্টাফ নিয়ে কাজ শুরু করে দিলেন দীপক। এই ক্যাম্প আবাশিক। শুধু রায়গঞ্জ নয়,এই শহরের বাইরে থেকেও একাধিক ছেলে-মেয়ে এই ক্যাম্পে ইতিমধ্যে ভর্তি হয়েছে। এদিন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে প্রায় ৯০ জন ফুটবল শিক্ষার্থী যোগ দিয়েছে। যার মধ্যে ৬০ জন ফুটবল শিক্ষার্থী ক্যাম্পে ভর্তিও হয়ে গিয়েছে।
এই ক্যাম্পের সঙ্গে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করেছে রায়গঞ্জের “ওরিয়েন্ট জুয়েলারি”। জেলায় জেলায় বহু ফুটবল ক্যাম্প থাকলেও স্পনসরের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সেই জায়গায় থেকে “ওরিয়েন্ট জুয়েলারি”-এর একটা ফুটবল ক্যাম্পের স্পনসর হিসেবে এগিয়ে আসা মানে বাংলার ফুটবলে সাপ্লাই লাইন তৈরি করতে এগিয়ে আসা। প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
“ওরিয়েন্ট জুয়েলারি”-এর কর্ণধার বিপ্লব ঘোষ “ইনসাইড স্পোর্টস”কে বলছিলেন,”রায়গঞ্জ আমাদের প্রাণের শহর। একটা সময় এই শহর থেকেই বহু ফুটবলার উঠে এসেছেন। পরবর্তীকালে ফুটবলে ভাটা পড়ে। এবার রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউট দারুন উদ্যোগ নিয়েছে। এই ক্যাম্প থেকেই একদিন একাধিক ফুটবলার উঠে আসবে। এই আশা আমিও করি। রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউটের এই উদ্যোগে আমাদের “ওরিয়েন্ট গ্রুপ” সামিল হতে পেরে খুব ভাল লাগছে।”
একই সঙ্গে এই রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউটের ফুটবল অ্যাকাডেমির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধল কলকাতার ৯৭ বছরের ক্লাব (কলকাতা প্রিমিয়ার ডিভিশন) জর্জ টেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাব। এই জর্জ থেকেই উঠে এসেছেন বহু ফুটবলার। এই জর্জ টেলিগ্রাফ থেকেই ক্রীড়া প্রশাসক হিসেবে উঠে এসেছেন কিংবদন্তি বিশ্বনাথ দত্ত,প্রদ্যোৎ দত্ত,সুব্রত দত্ত। “ওরিয়েন্ট রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউট ফুটবল কোচিং ক্যাম্পের প্রতিভাবান ফুটবলারদের জর্জ সহ কলকাতার একাধিক ক্লাবে খেলার সুযোগ করে দিতে তৈরি। বিশেষ কাজে আটকে যাওয়ায় অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি বাংলার কিংবদন্তি ফুটবল প্রশাসক প্রদ্যোৎ দত্তর পুত্র অনির্বান দত্ত। তিনিই জর্জটেলিগ্রাফের যুগ্মসচিব। তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসতে না পারলেও “ওরিয়েন্ট রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউট ফুটবল অ্যাকাডেমিকে এক শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। অনির্বান দত্ত জানিয়েছেন,”বাংলার ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে জেলার ফুটবলকে গুরুত্ব দিতেই হবে। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহরের ঐতিহ্য আছে। বহু ফুটবলার একটা সময় উঠে এসেছে জানি। এমন একটা উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউটের কর্তাদের। ধন্যবাদ জানাই ওরিয়েন্ট গ্রুপকে। তাঁরা এগিয়ে এসেছেন। সুষ্ঠুভাবে চলতে হলে স্পনসর প্রয়োজন। আমরাও যুক্ত হতে পেরে খুশি হয়েছি। আমাদের জর্জটেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাব ছাড়াও আরও অনেক ক্লাবেই এই ক্যাম্পের প্রতিভাদের খেলার সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করব। এভাবেই বাংলার ফুটবল এগিয়ে যাবে। আমি আশাকরি,এই ওরিয়েন্ট রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউট ফুটবল অ্যাকাডেমি” একদিন উত্তরবঙ্গ ফুটবলের সাপ্লাই লাইন হবে।”
এদিন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস। এই নতুন ক্যাম্পে এসে সন্দীপবাবুও মুগ্ধ। “আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি দীপক মন্ডলকে। তিনি কথা দিয়েছিলেন,এখানে এসে কোচিং করবেন। কথা রেখেছন। ধন্যবাদ জানাই “ওরিয়েনট গ্রুপ”-কে। তারা এগিয়ে আসায় ক্যাম্পটা এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাবে। এমন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউটের কর্তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আমাদের পুরসভা,ডিএসএ ফুটবলের প্রসারের জন্য চেষ্টা করছে। এবার রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউটও দারুন উদ্যোগ নিয়েছে। আশাকরি,এই ইনস্টিটিউটের হাত ধরে বহু ফুটবল প্রতিভা উঠে আসবে। আমাদের জেলার নাম উজ্জ্বল করবে।”
এদিন পুরোহিত দিয়ে পুজো করে এই অ্যাকাডেমির উদ্বোধন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন রায়গঞ্জের ভেটারেন্স ক্লাবের সদস্যরা। যার উদ্যোগে এই অ্যাকাডেমি শুরু হল সেই অরিজিত ঘোষ “ইনসাইড স্পোর্টস”-কেবলছিলেন,”আমরা অনেক দিন ধরেই একটা আবাশিক ফুটবল অ্যাকাডেমি করার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু করোনার জন্য দুই বছর নষ্ট হয়ে গেল। এবার অন্তত শুরু করা গেল। লক্ষ্য অনেক আছে। আমরা ধাপে ধাপে এগোতে চাই। দীপক মন্ডলের মতো একজনকে পেয়েছি। “ওরিয়েন্ট গ্রুপ”-কে আমরা পাশে পেয়েছি। পুরসভা,ডিএসএ,ভেটারেন্স ক্লাবেরও সহযোগিতা পাচ্ছি। সবাইকে নিয়েই আমরা এগোতে চাই।”
এই অ্যাকাডেমির প্রধান কোচ দীপক মন্ডল একটা সময় টানা ১২ বছর ভারতীয় দলে খেলেছেন। তিনি আসলে টিএফএ থেকে উঠে এসেছেন। পরবর্তীকালে জেসিটি, ইস্টবেঙ্গল,মাহিন্দ্রা, মোহনবাগান,কেরল ব্লাস্টারের মতো ক্লাবে চুটিয়ে খেলেছেন। দেশের হয়ে দুই বার নেহেরু কাপ ও একবার করে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ, এএফসি এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ২০০২ সালে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের বিচারে “বর্ষ সেরা ফুটবলার”-এর স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। ২০১০ সালে ভারত সরকার তাকে “অর্জুন” পুরস্কার দিয়ে সম্মান জানিয়েছিল। দীপক এখন কোচিংয়ে এসেছেন। ছোটদের নিয়ে কাজ করতেই বেশি পছন্দ করেন।
দীপক জানান,” আমি নিজে গ্রামের ছেলে। আমি জানি গ্রামে প্রচুর প্রতিভা আছে। রায়গঞ্জে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন বালুরঘাটের গৌতম গোস্বামী। উনিই বলেছিলেন,রায়গঞ্জে খুব ভাল ছেলে-মেয়ে আছে। সুযোগের অভাবে প্রতিভা হারিয়ে যাচ্ছে। এখানে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি খুশি। কারণ,এই অঞ্চলে খুব ভাল ভাল ফুটবলার আছে। আমার একটাই লক্ষ্য এখান থেকে ফুটবলার তুলে কলকাতার ভাল ক্লাব বা দেশের আরও ভাল অ্যাকাডেমিতে সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। কাজ শুরু করলাম। দেখা যাক কতদুর যেতে পারি। তবে আমি নিজের সেরাটাই দেব।”