মহমেডান স্পোর্টিং – ২ (মার্কোস/জসকরপ্রীত)
ইউনাইটেড স্পোর্টস – ২ (সুব্রত/জগন্নাথ)
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,কল্যাণী,৮ সেপ্টেম্বর : জঙ্গলমহলের শালবানী থেকে আরও ভেতরে অখ্যাত এক গ্রাম – টিলাখুলা। অভাবের সংসারে বাবা-মা,দিদি (বিয়ে হয়ে গিয়েছে), বোন এবং সুব্রত মুর্মূ। বোন মৌসুমী পুলিশ দলে ফুটবল খেলেন। বাবা চাষ করেন। দারিদ্র সব সময়ের সঙ্গী। এমন একটা গ্রাম থেকে স্কাউট করে সুব্রতকে তুলে এনেছিলেন ইউনাইটেড স্পোর্টসের নবাব ভট্টাচার্য। কে জানতো “আলোর টিমে” হাজার ওয়াটের আলো ফেলে দলকে আরও উজ্জ্বল করে তোলার ইঙ্গিত দেবেন অখ্যাত স্ট্রাইকার সুব্রত মুর্মু!
এই সুব্রতর জীবনে আজই প্রথম কলকাতা ফুটবল লিগ খেলা শুরু হল। তার শুরুটাই প্রিমিয়ার এ গ্রুপের হয়ে খেলা। তাও আবার সুব্রতর অভিষেক হল মহমেডানের বিরুদ্ধে। ইউনাইটেড স্পোর্টস তখন ০-১ গোলে পিছিয়ে। ম্যাচের বয়স ১৭ মিনিট। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মহমেডানের দুই ডিফেন্ডারকে ডজ করে ঠান্ডা মাথায় বলটা জালে রাখলেন সুব্রত। কে বলবে আজই ছিল তার অভিষেক ম্যাচ? আসলে বড় ম্যাচের, বড় মঞ্চে কখনও সখনও অখ্যাতদের বিখ্যাত হওয়ার আহ্বান জানায়। আজ সুব্রত যেন সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।
এই বছর মহমেডান স্পোর্টিং খুব ভাল দল গড়েছে। বিশেষ করে দুই বিদেশি তফাৎ গড়ে দিচ্ছেন। গত ৪০ বছর কলকাতা লিগ খেতাবের মুখ দেখেনি। মহমেডান প্রথম থেকে যেভাবে খেলছে তাতে ১৯৮০ এর পর ২০২১ লিগ জেতার সম্ভাবনা প্রবল।
তবে আজ, কল্যাণীর মাঠে বল পজিশন (৫৪ শতাংশ ) বেশি থাকলেও হেরেও যেতে পারত মহমেডান। ম্যাচের শুরুর ৭ মিনিটের মাথায় ইউনাইটেড স্পোর্টসের এক ডিফেন্ডারের ভুল ক্লিয়ারেন্স থেকে মার্কোস জোসেফ গোল করে মহমেডানকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন। দশ মিনিট পর লিগে অভিষেক হওয়া সুব্রতর দুরন্ত গোল। এই গোল দেখার জন্য বহুদুর থেকে হেঁটে আসা যায়। ২৮ মিনিটের মাথায় মার্কোসের ক্রশ থেকে হেডে গোল করে মহমেডানকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেন জসকরপ্রীত সিং।
আক্রমন-প্রতিআক্রমণের খেলায় কখনই মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়তে দেখা যায়নি ইউনাইটেড স্পোর্টসকে। বরং চার ডিফেন্ডারকে রক্ষণে রেখে মাঝমাঠ ও ফরোয়ার্ড লাইন মহমেডানের বক্সে আছড়ে পড়েছে বার বার। নবাগত সুব্রতর তৈরি করে দেওয়া গোলের সুযোগ নষ্ট না হলে আজ তিন পয়েন্ট নিয়ে ঘরে ফিরত ইউনাইটেডের ছেলেরা। এদিন এক ঝাঁক বাঙালি ফুটবলার নিয়ে কল্যাণীর মাঠে ফুল ফোটালেন ইউনাইটেডের বেলজিয়ামের কোচ স্টিভ লিয়ন হোগার্ড।
বেগুনি শিবিরের অধিনায়ক জগন্নাথ ওঁরাও। আজ মাঠে নেমে তিনি দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গেলেন। ১-২ পিছিয়ে থেকে প্রল্হাদের পাস থেকে জগন্নাথ গোল করে ২-২ করেন। ম্যাচ শেষ হয় ২-২ গোলে। ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হয়েছেন জগন্নাথ ওঁরাও। আর উদীয়মান ফুটবলারের পুরস্কারটা পেলেন শালবনীর টিলাখুলা গ্রামের অখ্যাত সুব্রতর হাতে। অতীতে বহু ফুটবলার এমন চমক দিয়ে বাংলার ফুটবলে ডুব সাঁতারুর মতো জল ফুঁড়ে উঠে এসেছে যেমন, তেমনি জলের তলে ডুবেও গিয়েছে অনেক প্রতিভা। তাছাড়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের কোনও ফুটবলার এখনও বাংলা ফুটবলের তারকা হয়ে উঠতে পারেননি। এই সুব্রত কী পারবেন তারকা হতে? প্রতিভা তুলে আনাটা যত কঠিন, তার থেকেও আরও কঠিন কাজ এই সব প্রতিভাদের আগলে রেখে গ্রুমিং করা। এই দায়িত্ব কিন্তু নবাব ভট্টাচার্য,আলোকেশ কুন্ডুদেরও মধ্যেও পড়ে।