অবহেলিত জেলা, ভুগছে বাংলার ক্রিকেট, দায়ী CAB! অভিযোগ SMKP কর্তা মনোজ ভার্মার

0

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : শিলিগুড়ির খেলা মানেই টেবল টেনিস। সঙ্গে ফুটবলও ছিল। এই দুটি খেলা এই শহরে ক্রমশ পিছনের দিকে চলে যাচ্ছে। শিলিগুড়িতে এখন ক্রিকেটকে নিয়ে উন্মাদনা বেশি। কিন্তু বেশিদিন এই উন্মাদনা থাকবে না। থাকবে শুধু পাড়ায় পাড়ায় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। যেখানে টাকা উড়ছে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু আস্তে আস্তে শেষ হবে আসল ক্রিকেট। আর এর জন‍্য তার দায় নিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ‍্য ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা CAB কেই। এমন অভিযোগ করলেন শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ (SMKP)- এর ক্রিকেট সচিব মনোজ ভার্মা।

তিনি একজন প্রাক্তন ক্রিকেটার। বেশ কয়েক বছর ধরে SMKP এর ক্রিকেট সচিব পদে আছেন। শুধু শিলিগুড়ি নয়,উত্তরবঙ্গের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ ভাল নয়। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর কাছে বলে ফেললেন অনেক কথা। আঙুল তুললেন CAB-এর দিকে। মনোজ ভার্মার সাফ কথা,”শুধু শিলিগুড়ি বললে ভুল হবে,উত্তরবঙ্গের কোনও জেলাতেই সেই ভাবে নজর দেয়না CAB কর্তারা। নজর দিলে বাংলার ক্রিকেটে বড় সাপ্লাই লাইন হতে পারত এই উত্তরবঙ্গ।

ঠিক কি বলেছেন SMKP -এর ক্রিকেট সচিব মনোজ ভার্মা? তাঁর কথায়,”CAB আগে তবু জেলায় নজর দিত। এখন সেই ভাবে নজর দেয় না।” কিন্তু CAB তো জেলায় জেলায় কোচ পাঠায়,আম্পায়ারদের নিয়ে কাজ করছে,ইউনিফর্ম কোচিং হচ্ছে। তাহলে সমস‍্যাটা কোথায়?মনোজ বলেন,”সাত,দশদিনের জন‍্য কোচ পাঠিয়েই কি সব সমস‍্যার সমাধান হয়ে গেল? জেলায় পরিকাঠামোগত ভাবে CAB কি করছে আমাকে বলুন। খোঁজ নিয়ে দেখুন,কোনও জেলায় পরিকাঠামোর উপর জোর দেয় না CAB কর্তারা। তাদের তো টাকার অভাব নেই। টাকা আছে অথচ সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই।”

আপনি বলছেন পরিকাঠামো নেই। জগমোহন ডালমিয়ার নামে যে ইন্ডোর উইকেটের জন‍্য কয়েক লক্ষ টাকা প্রত‍্যেক জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে CAB দিয়েছে। ওই টাকায় প্রায় সব জেলা ইন্ডোর উইকেট তৈরি করেছে। আপনারা পারলেন না কেন? এখানে CAB-এর দোষ কোথায়? উত্তরে মনোজ ভার্মা বলেন,”আমাদের শিলিগুড়ি শহরে মাঠের অভাব। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে এখন শুধু ফুটবল হয়। আর চাঁদমনি মাঠে হয় ক্রিকেট। যখন CAB এর টাকাটা আসে তখন আমাদের SMKP কমিটি মেম্বাররা করতে পারেননি মাঠের অভাবে।”

আমি কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম ঘুরে ঘুরে দেখেছি। স্টেডিয়ামের গোষ্ঠপালের মূর্তির পিছন দিকটায় যে জায়গাটা আছে সেখানেও তো ইন্ডোর পিচটা করা যেতে পারত। জবাবে মনোজ ভার্মা বলেন,”তখন আমাদের সংস্থার যে কমিটি ছিল তারা করে উঠতে পারেনি। হয়তো ভেবেছিলেন অন‍্য কোনও মাঠের ব‍্যবস্থা করে ভাল করে করবেন। সেটা আজও হয়ে ওঠেনি। স্টেডিয়াম তো এখন শিলিগুড়ি পুর নিগমের। আমরা মেয়র গৌতম দেবের সঙ্গে এই ব‍্যাপারে কথা বলেছি। এখন যেহেতু স্টেডিয়ামের সংস্করণের কাজ শুরু হবে। তাই এখনই হাত দেওয়া যাবে না। এটাও ঠিক CAB আমাদের অভিভাবক। তাদের অনেক ক্ষমতা। যে সব জেলায় সমস‍্যা বেশি সেই সব সমাস‍্যার সমাধান করতে CAB এগিয়ে এলে খুব ভাল হয়। ক্রিকেটের উন্নয়নে জেলার সমস‍্যাটাকে নিজেদের সমস‍্যা ভাবতে হবে CABকে। পরিকাঠামোগত ভাবে অন্তত একটু সাহায‍্য করুক।”

পরে তিনি আরও বলেন,”আমাদের চাঁদমনি মাঠ ঘুরে গিয়েছেন অভিষেক ডালমিয়া। তিনি টার্ফ বানিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছিলেন। পরে অবশ‍্য CABএর নতুন কমিটি হল। তারপর আরও কোনও কিছুই এগোয়নি।”

কথা বলতে বলতে CAB বিরুদ্ধে চাঞ্চল‍্যকর অভিযোগও করে বসলেন মনোজ ভার্মা। তিনি বলছিলেন,”জেলার যারা CAB প্রতিনিধিত্ব করেন তাঁরা সমস‍্যার কথা বলেন না,নাকি বলতে দেওয়া হয় না? আমার কারও উপর ব‍্যক্তিগত রাগ নেই। তবু বলছি, CAB – এর মিটিংয়ে জেলার প্রতিনিধিদের জন‍্য কলকাতায় গাড়ি,হোটেলে থাকা,খাওয়ার সুব‍্যবস্থা করে আসছে। এত ভাল মানের পরিষেবা দিয়ে CAB কর্তারা আসলে প্রতিনিধিদের মুখ বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। এর ফলে যা হওয়ার তাই ঘটছে। এটা আমার ব‍্যক্তিগত মতামত। আপনি তো কলকাতা শহরে থাকেন। CAB তেও যাতায়াত আছে। খোঁজ নিয়ে দেখুন, কোনও মিটিংয়ে কেউ আসল সমস‍্যার কথা বলে না। আর দুই একজন বললেও তাতে কাজ হয় না। খারাপ লাগে। জেলাকে গুরুত্ব না দেওয়ার মাসুল গুনছে বাংলার ক্রিকেট। ভিন রাজ‍্য থেকে ক্রিকেটার এসে বাংলার হয়ে রনজি খেলছে। ইন্ডিয়া খেলছে। বাংলাকে একটা প্ল‍্যাটফর্ম হিসেবে ব‍্যবহার করে ভিনরাজ‍্যের ক্রিকেটাররা নিজের কাজ হাসিল করে নিজের রাজ‍্যে ফিরে যাচ্ছে। আর আমাদের রাজ‍্যের ক্রিকেটাররা সেই ভাবে সুযোগই পাচ্ছে না। এই যদি CAB এর দৃষ্টিভঙ্গি হয় তাহলে এভাবেই চলবে।”

মনোজ ভার্মা প্রশ্ন তুলেছেন,”জেলা থেকে প্রতিভা তুলে নিয়ে গিয়ে কলকাতায় ৬ মাস গ্রুমিং করা হোক। সেই সব তো কিছুই করে না। কলকাতায় জেলার ক্রিকেটারদের থাকার ব‍্যবস্থা নেই। গতবছর জেলায় বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়েছে। সেই টুর্নামেন্টের ক্রিকেটারদের খাওয়ার টাকা কমিয়ে দিয়েছে CAB-এর বর্তমান কমিটি। ওরাই তো এখন খাবে। ওদের ভাল ফুড প্রয়োজন। আর সেটাই কমিয়ে দেওয়া হল। কেউ কিছু বলেও না।”

একটু থেমে মনোজ বলতে থাকেন,” সৌরভ গাঙ্গুলি যখন CAB সভাপতি হয়েছিলেন তখন তিনি ভিশন ২০২০ প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। সেটা হলে জেলা তথা বাংলার ক্রিকেট লাভবান হত। কিন্তু আমার প্রশ্ন সৌরভের সেই ভিশন ২০২০ কোথায় গেল? আমি আবার বলছি,CAB এর অর্থ আছে। কিন্তু বাংলা ক্রিকেটের সামগ্রিক উন্নয়নে সদিচ্ছার অভাব স্পষ্ট। বাংলার ক্রিকেট শুধু কলকাতা ও ভিনরাজ‍্য কেন্দ্রিক হলে চলবে না। জেলায় জেলায় তৃণমূল স্তর থেকে প্রতিভা তুলে আনতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলার ক্রিকেট আরও খারাপের দিকে যাবে।”

শুনেছি, শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব কুন্তল গোস্বামী আপনাকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। লিগটাও ভাল ভাবে পরিচালনা করছেন। জবাবে মনোজ ভার্মা বলেন,”ঠিকই শুনেছেন। কুন্তলদা আমাকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দিয়েছেন। ক্রিকেটটা নিয়ে আমিও অনেক স্বপ্ন দেখি। কিন্তু ওই দুই মাস ক্রিকেট চর্চা করে কি হবে বলুন তো? সাড়া বছর একটা সিস্টেমের মধ‍্যে ক্রিকেট চর্চা করলে তবেই এগোনো সম্ভব। আমাদের জেলায় অনেক প্রতিভা আছে। পরিকাঠামোর অভাবে সব মার খাচ্ছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here