ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : অতীতে ময়দানের কেউ সমস্যায় পড়লে ব্যক্তিগত ভাবে পাশে থেকেছেন অনেককেই। এবার সেই ‘ব্যক্তি’ ছাপিয়ে একটি সংগঠনের মধ্যে দিয়ে ময়দানের বিপদে পড়া খেলোয়াড়, কর্তাদের পাশে থাকার জন্য একটি মঞ্চ তৈরি হয়ে গেল। যার পোষাকী নাম – ” ময়দান সাথী।”
শুক্রবার এই মর্মে একটি আমন্ত্রণ পত্র পৌঁছে গিয়েছিল একাধিক ক্লাব কর্তাদের কাছে। আর এই সংগঠেনের পক্ষ থেকে গড়ের মাঠের সক্কলকে “ময়দান সাথী”র জন্মলগ্নে সামিল হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন ময়দানের অভিজ্ঞ কর্তা অজিত ব্যানার্জি। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় দাদা। ময়দানে যাকে ‘ষষ্ঠীদা’ নামেই সবাই জানে,চেনে। এই অজিতবাবু আবার আইএফএ-এর সভাপতিও। ময়দানের যাঁরা প্রবীন কর্তা, তাঁদের অনেকেই মনে করেন, তৃণমূল পার্টি, সরকারে আসার পর অনেক নেতা,মন্ত্রী নতুন ক্লাব করেছেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন খেলায় অংশও নিচ্ছে। কিন্তু যেদিন তৃণমূল পার্টি, সরকারে থাকবে না, সেই দিন এইসব নেতা,মন্ত্রীর ক্লাব আদৌ টিকে থাকবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু অজিত ব্যানার্জির কালীঘাট এম এস ক্লাব থাকবে। কারণ, একটাই, ষষ্ঠী ওরফে অজিত ব্যানার্জি ময়দানে যেদিন থেকে ক্লাব করছেন সেই সময় তার তাঁর বোন মমতা রাজনীতিতে এসেছিল কিনা সন্দেহ। প্রায় ৫৪ বর ধরে কালীঘাট এম এস ক্লাব করছেন অজিতবাবু। তিনি নিজে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত নন। তাঁর দুটি প্রেম – ফুটবল আর গড়ের মাঠ। সেই অজিত ব্যানার্জিকে সামনে রেখেই ময়দানের বেশ কিছু কর্তা গড়ের মাঠের সমস্যা জর্জরিত ব্যক্তিদের,খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই শনিবার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম চত্বরে শুরু হল “ময়দান সাথী”র পথ চলা।
এই সংগঠনে আহ্বায়কের ভূমিকায় আছেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাস। তিনি আইএফএ-এর সহসভাপতি। আছেন মুখ্যমন্ত্রীর ছোট ভাই বাবুন ওরফে স্বপন ব্যানার্জি। তিনিও মাঠের লোক। নয়ের দশকে তাঁকে মোহনবাগান ক্লাবের লনে বসে থাকতে দেখা যেতো। বাবুন যে মোহনবাগান অন্তপ্রাণ তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাঁর বাড়িতে গেলেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। মোহনবাগানের সবুজ মেরুন রং সহ লনটাই যেন বাবুনের বাড়ির উঠোনে উঠে এসেছে। অনেকেই জানেন না, এই বাবুন ব্যানার্জিও ময়দানের বহু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এখনও পাশে দাঁড়ান। সেই বাবুনও আজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে “ময়দান সাথী”র আহ্বায়ক হিসেবে এগিয়ে এসেছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় “ময়দান সাথী”র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে এসে অজিত ব্যানার্জির পাশে দাঁড়িয়ে মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত স্পষ্টভাবে কিছু সত্যি কথা বলেছেন। দেবাশিসবাবুর কথায়,”এই সংগঠনের উদ্বোধনে আসার জন্য অজিতদা আমাকে ফোন করেছিলেন। প্রথমে ভেবেছিলাম, এটার মধ্যে কোনও রাজনৈতিক বাপার আছে কিনা। পরে ভেবে দেখলাম, অজিতদা রাজনীতির উর্ধ্বে। তাঁর নেতৃত্বে যখন এই সংগঠন হচ্ছে, তখন ভালই হবে। এখানে বিধায়ক রানাদা আছেন, তবু বলছি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের থেকে ময়দান করা ব্যক্তিত্বদের মানসিকতা অনেক বড় হয়। আমার একটাই অনুরোধ, এই সংগঠনের চলার ক্ষেত্রে যেন ওই দল, এই দল না হয়। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে পারলে অনেকটা এগিয়ে যাবো।”
এই “ময়দান সাথী”র কাজ কি? অজিতবাবুর কথায়,”আমরা প্রতিনিয়ত যারা ময়দানে কাজ করি, তাঁদের অনেকেই অনেক সমস্যায় পড়েন। অনেক খেলোয়াড় আছে তাদেরও অনেক সমস্যা আছে। পাশে থেকে সেই সব সমস্যার সমাধান করাটাই মূল লক্ষ্য।” কিন্তু আইএফএ থাকা সত্বেও এই ধরনের মঞ্চ তৈরির কথা কেন মনে হল? উত্তরে অজিত ব্যানার্জি বলেন,”আইএফএ নিজের সংবিধান মত চলে। এখানে “ময়দান সাথী”র কাজের সঙ্গে আইএফএ-এর কোনও মিল নেই। এটা একটা সমাজসেবী সংস্থা। এই মুহূর্তে রেজিস্ট্রেশন হয়নি। পরে হয়তো হবে। কাজের মধ্যেই “ময়দান সাথী” এগোবে।”
এই মুহূর্তে আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত বিশেষ পারিবারিক কাজ নিয়ে রাজ্যের বাইরে আছেন। “ময়দান সাথী” সংগঠনের আত্মপ্রকাশের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে “ইনসাইড স্পোর্টস”কে ফোনে অনির্বান দত্ত বলেন,”এটা তো খুবই ভাল উদ্যোগ। এর আগেও ময়দানের অনেকের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। কিন্তু আইএফএ এমন কাজ করতে পারে না। সংবিধান তার অনুমতি দেয় না। একটা ক্লাব বা খেলোয়াড়কে সাহায্য করলে সব অ্যাফিলিয়েটেড ইউনিটের খেলোয়াড়দের দিতে হবে। সেটা আইএফএ’র পক্ষ্যে সম্ভব নয়। অজিতদা আমার মেন্টর। খুব ভাল মানুষ। অজিতদার নেতৃত্বে যখন “ময়দান সাথী” শুরু হল, তখন এই সংগঠন অনেকদুর এগোবে। আগাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এদিনের অনুষ্ঠানের শেষে সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি হেল্প লাইন হিসেবে কিছু ব্যক্তির নাম ও ফোন নম্বর সহ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই তালিকায় আছেন, স্বরূপ বিশ্বাস, স্বপন ব্যানার্জি,পার্থসারথী গাঙ্গুলি, রাকেশ (মুন) ঝাঁ, জয়দীপ মুখার্জি, নজরুল ইসলাম, শঙ্কর দাস,রবীন ঘোষ, বেলাল আহমেদ। সমস্যায় পড়লেই এঁদের ফোন করা যাবে। সমস্যাটা যথাযথ বিচার করেই মুস্কিল আসানের চেষ্টা করবেন এঁরা।